বাংলা নিউজ > ঘরে বাইরে > Paris at midnight: শরীরচর্চা ও পরিবেশ সংরক্ষণ! মধ্যরাতে প্যারিসের আলো নিভিয়ে দেন একদল ক্রীড়াবিদ

Paris at midnight: শরীরচর্চা ও পরিবেশ সংরক্ষণ! মধ্যরাতে প্যারিসের আলো নিভিয়ে দেন একদল ক্রীড়াবিদ

মধ্যরাতের প্যারিস। ছবি ডয়চে ভেলে

২০২০ সাল থেকে এই গোষ্ঠী রাত একটা নাগাদ প্যারিসের কেন্দ্রস্থলে মিলিত হয়৷ তারপর আলোকিত শো-কেসের সন্ধানে শিকার অভিযান শুরু হয়৷ তবে সেই প্রক্রিয়ায় কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়৷

একই সঙ্গে শরীরচর্চা এবং পরিবেশ সংরক্ষণ কি সম্ভব? প্যারিসের একদল ক্রীড়াবিদ এক ঢিলে দুই পাখি মারার পথ বেছে নিয়েছেন৷ জ্বালানির অপচয় কমাতে তাদের অভিযান এমনকি পৌর কর্তৃপক্ষেরও সমর্থন আদায় করছে৷ পরিবেশ সংরক্ষণের লক্ষ্যে প্যারিসের ‘অন দ্য স্পট' নামের সংঘের সাহস ও উদ্যমের শেষ নেই৷ পার্কুর ক্রীড়াবিদ হিসেবে সদস্যরা সহজেই রাতে দেওয়াল বেয়ে উঠে দোকানের শো-কেস ও বিজ্ঞাপনের হোর্ডিংয়ের বাতি নিভিয়ে দেন৷ পার্কুর ক্রীড়াবিদ হিসেবে এমেরিক কোত্যাঁ এই উদ্যোগ সম্পর্কে বলেন, ‘জ্বালানির অপচয় এড়াতেই আমরা এই কাজ করি৷ মনে রাখতে হবে, বিশ্বের জনসংখ্যা প্রায় ৭০০ কোটি৷ সবাই যদি ছোট ছোট পদক্ষেপ করে, তাহলে আমরা সবাই মিলে অনেক পরিবর্তন আনতে পারি৷ সেটাই আমাদের বার্তা৷ কাজটা করতেও ভালো লাগে৷ আমরা চ্যালেঞ্জ ভালোবাসি এবং সন্ধ্যাটা সুন্দর কাটে৷ সেটাই সবচেয়ে বেশি জরুরি৷'

২০২০ সাল থেকে এই গোষ্ঠী রাত একটা নাগাদ প্যারিসের কেন্দ্রস্থলে মিলিত হয়৷ তারপর আলোকিত শো-কেসের সন্ধানে শিকার অভিযান শুরু হয়৷ তবে সেই প্রক্রিয়ায় কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়৷ ‘অন দ্য স্পট' উদ্যোগের প্রতিষ্ঠাতা কেভিন হা বলেন, ‘নির্দিষ্ট কাঠামোর মধ্যে আমাদের অভিযান চলে৷ জানালার যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, আমরা সে দিকে নজর রাখি৷ ল্যাম্পপোস্টের মতো নাগরিক পরিষেবা কাঠামোয় আমরা হাত দেই না৷ ওষুধের দোকান বা পুলিশ স্টেশন থেকেও দূরে থাকি৷ তাছাড়া নিজেদের চোট লাগতে পারে, এমন কোনও কাজ আমরা করি না৷'

সহজেই কয়েকটি আলোর সুইচের নাগাল পাওয়া যায়৷ তবে চার মিটার উঁচু পর্যন্ত সুইচ পর্যন্ত পৌঁছতে এই গোষ্ঠীর কোনও সমস্যা হয় না৷ ক্রীড়াবিদ হিসেবে নিজেদের দক্ষতাই তাদের সম্বল৷ বিপদ এড়াতে বৃষ্টি বা বরফের সময় তাঁরা সেই কাজ করেন না৷ এমেরিক কোত্যাঁ বলেন, ‘পুলিশের সামনে পড়লে আমরা একটু আলোচনা করে বুঝিয়ে বলি, কেন এই কাজ করছি৷ কোনও কিছু নষ্ট করি না বলে সাধারণত আমাদের কোনও সমস্যা হয় না৷ এটা সদিচ্ছার প্রশ্ন এবং ভালো ও অর্থবহ কাজ৷'

৩০ বছর বয়সি কেভিন হা এই গোষ্ঠীর আয়োজক৷ ২০০৭ সাল থেকে এই ইঞ্জিনিয়ার পার্কুর ক্রীড়া চর্চা করছেন৷ অনুশীলনের লক্ষ্যে দিনের বেলায় তিনি প্যারিসের এক বহুতল ভবনের উঠানে সমমনস্ক মানুষের সঙ্গে মিলিত হন৷ দিনে কমপক্ষে আড়াই ঘণ্টা কসরৎ করেন তিনি৷ কেভিন হা বলেন, ‘সেটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় প্রেরণা এবং এই ক্রীড়া আমাদের সংঘের ডিএনএ-ও বটে৷ ইকোলজির প্রতি আমাদের সবারই টান রয়েছে, এবং এই সমস্যা সবাইকেই প্রভাবিত করে৷ তবে ভুললে চলবে না যে আমরা কিন্তু কোনও রাজনৈতিক গোষ্ঠী নই৷ চরমপন্থি পরিবেশবাদীদের সঙ্গে আমাদের কোনও সম্পর্ক নেই৷ আমাদের কাছে ক্রীড়াই মূলমন্ত্র৷'

আজ রাতেও কেভিন হা-র নেতৃত্বে গোষ্ঠীর সদস্যরা মিলিত হচ্ছেন৷ হাতে বেশ কিছু কাজ রয়েছে৷ বেশিরভাগ পর্যটক ও স্থানীয় বাসিন্দা এই গোষ্ঠীর কাজকে সমর্থন করেন৷ প্যারিস প্রেম-ভালোবাসা ও আলোকসজ্জার শহর হিসেবে পরিচিত৷ ২০১৮ সালের এক বিধি অনুযায়ী রাত একটা থেকে ভোর ছয়টা পর্যন্ত শো-কেসের আলোকসজ্জা ও হোর্ডিং-এর আলো বন্ধ রাখার কথা৷ সে কারণে প্যারিসের পৌর কর্তৃপক্ষও এই ক্রীড়াবিদদের কাজকে স্বাগত জানায়৷

পৌরসভার কাউন্সিলার আন্ সুইরি বলেন, ‘এটা ঠিক পুরোপুরি আইনি পথ না হলেও তারা তো কোনও কিছু নষ্ট করছে না৷ সচেতনতা বাড়ানোর ভালো উদ্যোগ৷ তাছাড়া আমরা নিজেরা পোস্টার ও বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আলো জ্বালিয়ে রাখার সমস্যা সম্পর্কে বেশি কার্যকর হতে পারতাম না, যেমনটা এই অভিযান সম্ভব করছে৷' জলবায়ু সংরক্ষণের জন্য ক্লাইম্বিং শখ হিসেবে আদর্শ৷ কেভিন হা ও তাঁর গোষ্ঠীর সদস্যরা ক্রীড়ার প্রতি ভালোবাসার সঙ্গে এক মহৎ উদ্দেশ্যের মেলবন্ধন ঘটাচ্ছেন৷

বন্ধ করুন