ধর্মগুরুর ছদ্মবেশে শিশু নিগ্রহকারী! যে শিশু-কিশোররা তার কাছে আসত ধর্মের পাঠ নিতে, তাদেরই নিজের শিকার বানাত সে! সোমবারই সেই অত্যাচারীকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল আদালত। সাজা শোনাল মঙ্গলে (১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫)।
আদালতের রায়, নিজের অপরাধের শাস্তি হিসাবে ওই তথাকথিত ধর্মগুরুকে ১৪ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। কাশ্মীরের সোপোর শহরের দুই আক্রান্তের কিশোরের রুজু করা মামলার ভিত্তিতে এই রায় দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার এই রায় দেন সোপোরের মুখ্য বিচার বিভাগীয় বিচারক মীর ওয়াজাহত। শিশু নিগ্রহের ঘটনায় অভিযুক্ত এয়জাজ আহমেদ শেখকে দোষী সাব্যস্ত করেন তিনি। জম্মু ও কাশ্মীরের রণবীর পেনাল কোড (আরপিসি)-এর ৩৭৭ নম্বর ধারা (অস্বাভাবিক অপরাধ বা বিকৃত অপরাধ) অনুসারে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
আদালতের পক্ষ থেকে রায় ঘোষণা করার সময় বলা হয়, 'এই মর্মে এই আদালত এই দু'টি অপরাধের প্রত্যেকটির ক্ষেত্রেই সর্বোচ্চ ৭ বছর করে সাজা শোনাচ্ছে। যেহেতু অভিযুক্ত ব্যক্তি দুই আক্রান্তের সঙ্গে হওয়া অপরাধেই আলাদা আলাদাভাবে দোষী সাব্যস্ত হয়েছে, তাই আদালত তার অধিকারবলে দু'টি মামলার জন্যই আলাদা আলাদা করে সাজা ঘোষণা করছে।'
একইসঙ্গে আদালত জানিয়ে দেয়, এই দু'টি ঘটনায় আক্রান্ত দু'জনকেই ক্ষতিপূরণ হিসাবে ৫০ হাজার টাকা করে দিতে হবে। এর সঙ্গে আদালত তার রায়ে যুক্ত করে, 'এর অর্থ হল - দোষী ব্যক্তিকে একত্রে মোট ১৪ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।'
সূত্রের খবর, ধর্মীয় শিক্ষা প্রদানের অছিলায় বহু নাবালক, শিশু, কিশোরের উপর যৌন অত্যাচার চালানোর অভিযোগ উঠেছিল শেখের বিরুদ্ধে। অল্পবয়সীদের আশীর্বাদ প্রদানের নামে এই অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছিল সে।
শেষমেশ ২০১৬ সালের মার্চ মাসে দশম শ্রেণির এক ছাত্র তার বাবাকে সঙ্গে নিয়ে বোমাই থানায় শেখের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করে। পুলিশের পক্ষ থেকে সেই মামলা রুজু হওয়ার পর প্রথমবার ২০১৭ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর আদালতে হাজির হয় শেখ। কিন্তু, সেই সময় তার কোনও আইনজীবী ছিল না।
আক্রান্ত নাবালকদের আইনজীবী জানান, শেখ ওই নাবালকদের পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে তাদের সঙ্গে জোরজবরদস্তি করত ও অস্বাভাবিক বা বিকৃত যৌন সম্পর্ক স্থাপন করত। এই ঘটনার ফলে ওই নাবালকদের মনে যে ক্ষত তৈরি হয়েছে, তার ভার আজও, এই যুবা বয়সে পৌঁছেও তাঁদের বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। আদালত আক্রান্তদের এই যন্ত্রণা অনুভব করেছে এবং তাদের প্রতি সমব্যথী অবস্থান প্রকাশ করেছে।