এবার কাঁকড়ার ব্যবসা করতে চলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প! তাও আবার বাংলাদেশে! ইতিমধ্যেই তাঁর নামে কাঁকড়া ব্যবসার জন্য একটি ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু করেছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। বিষয়টি অবাক লাগলেও এমনটাই ঘটেছে। গত ১১ মার্চ বিকেলে ডিএনসিসির তরফে এই লাইসেন্স ইস্যু করা হয়েছে। আর তাতে মার্কিন রাষ্ট্রপতির ছবিও রয়েছে। এনিয়ে রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে বাংলাদেশে।
আরও পড়ুন: 'চিন যুদ্ধের' গোপন তথ্য মাস্কের কাছে? NYT রিপোর্টে চাঞ্চল্য, ট্রাম্প বললেন…
সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, লাইসেন্সে ওই আবেদনকারীর ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নাম রয়েছে ‘ট্রাম্প অ্যাসোসিয়েশন’। আর এর মালিক হলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি মালিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক সিটির বাসিন্দা বলে উল্লেখ রয়েছে লাইসেন্সে। তবে লক্ষ্য করার বিষয় হল, ব্যবসার ঠিকানা দেওয়া রয়েছে ঢাকার আফতাবনগরের একটি জায়গায়। আসলে এই লাইসেন্স মার্কিন প্রেসিন্টের নামে হলেও এটি ভুয়ো। এমনটাই দাবি করেছেন ডিএনসিসির কর্মকর্তারা।
সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকরা এমন ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তথ্য অনুযায়ী, আবেদনকারী এই ট্রেড লাইসেন্স পেতে ফি-সহ মোট ২ হাজার ২৬৫ টাকা খরচ করেছেন। লাইসেন্সের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন মাস পর্যন্ত। আরও জানা গিয়েছে, এই লাইসেন্সের আবেদনের সময় আবেদনকারী একটি অফিস ভাড়ার চুক্তিপত্র সহ আরও একটি ভিসার নথি যুক্ত করেছেন। সেটি একজন চিনা নাগরিকের বাংলাদেশের ভিসা। লাইসেন্সে ব্যবসার ধরন হিসেবে লেখা রয়েছে- কাঁকড়া, মাছ বিক্রেতা।
অফিসের যে ঠিকানা দেওয়া হয়েছে লাইসেন্সে। সেই ঠিকানায় গিয়েছিলেন প্রথম আলোর প্রতিনিধিরা। তবে সেখানে গিয়ে প্রতিনিধিরা জানতে পারেন, ১০ তলার বাড়িটি নতুন এবং সেখানে কোনও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নেই। সেটা একটি আবাসন। ওই বহুতলের মালিকপক্ষ সেখানে ব্যবসার কথা অস্বীকার করেছেন। কিন্তু, কীভাবে তৈরি সম্ভব এই নামের লাইসেন্স? সে প্রসঙ্গে ডিএনসিসির রাজস্ব বিভাগের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, সম্প্রতি ডিএনসিসির রাজস্ব বিভাগের একটি সভায় ট্রেড লাইসেন্স আরও দ্রুত ও সহজ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাতে আবেদনকারী লাইসেন্সের জন্য আবেদন করে প্রয়োজনীয় নথিপত্র এবং করে টাকা জমা দিলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে ই-ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু হয়ে যাবে। আবেদনকারী নিজেই সেই লাইসেন্স প্রিন্ট আউট নিয়ে ব্যবহার করতে পারবেন। তবে এরফলে যে ভুয়ো লাইসেন্স তৈরি বাড়ছে তা এই ঘটনা থেকে সামনে এসেছে।
এমন ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই লাইসেন্স ইস্যু করার পদ্ধতি নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। আধিকারিকদের অনেকের দাবি, আগের পদ্ধতিতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হতো। কিন্তু, এখন আর তা করা হয় না। ফলে ভুয়ো লাইসেন্স তৈরির প্রবণতা বাড়ছে।
যদিও ট্রাম্পের নামে ইস্যু হওয়া ই-ট্রেড লাইসেন্সর কথা স্বীকার করে নিয়েছেন ডিএনসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মহম্মদ মনিরুজ্জামান। তবে তিনি দাবি করেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের নামে লাইসেন্স তাঁদের তরফেই করা হয়েছে। আসলে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নামেও যে ই-ট্রেড লাইসেন্স হতে পারে তা পরীক্ষা করার জন্যই এটা করা হয়েছে। এটা একটা ট্রায়াল ছিল বলে দাবি করেছেন তিনি। মনিরুজ্জামান আরও দাবি করেছেন, শুধু ট্রাম্পই নয়, এলন মাস্কের নামেও লাইসেন্স ইস্যু হয়ে যাচ্ছে এই পদ্ধতিতে। ডিএনসিসির আধিকারিকদের বক্তব্য, এটা সম্ভব হচ্ছে কারণ নয়া স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে নথিপত্র যাচাইয়ের সুযোগ থাকছে না। শুধু তাই নয়, এর ফলে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি ও আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা থাকছে।