চলতি বছরের ২৬ অগস্ট। সেদিন ছিল জন্মাষ্টমী। সারা দেশের মানুষ ব্যস্ত ছিল শ্রীকৃষ্ণের জন্মোৎসব পালন করতে। সেদিনই উত্তরপ্রদেশের হামিরপুরে উদ্ধার হয় একটি শিশুপুত্র।
শিশুটিকে উদ্ধার করা হয় একটি গাছের ডালে ঝুলন্ত অবস্থায়। পরবর্তীতে বোঝা যায়, খুব সম্ভবত, ওই শিশুটিকে পাশের একটি সেতুর উপর দিয়ে ছুড়ে নীচে ফেলা হয়েছিল! কিন্তু, সরাসরি মাটিতে না পড়ে সে আটকে যায় একটি গাছের ডালে।
শিশুটিকে যখন উদ্ধার করা হয়, তখন তার বয়স আনুমানিক সাতদিন। তার শরীরে অন্তত ৫০টি ক্ষত চিহ্ন ছিল। এমনকী, শিশুটির পিঠে কোনও পশুর কামড়ের দাগও পাওয়া গিয়েছিল।
সেই অবস্থাতেই তাকে কানপুরের লালা লাজপত রাই হাস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শিশুটির অবস্থা দেখে সেদিন চোখে এসে গিয়েছিল কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের।
ওইটুকু একটি বাচ্চার সঙ্গে কেউ কীভাবে এমন আচরণ করতে পারে, তা ভেবেই উঠতে পারছিলেন না তাঁরা। এমনকী, আদৌ বাচ্চাটিকে বাঁচানো যাবে কিনা, তা নিয়েও নিশ্চিত ছিলেন না চিকিৎসকরা। তবে তাঁরা হাল ছাড়েননি।
যার সুফল মিলল প্রায় দু'মাস পর। এই দু'মাস টানা চিকিৎসা ও অদম্য প্রচেষ্টায় অবশেষে সুস্থ হয়ে ওঠে হাসপাতালে সকলের আদরের ছোট্ট 'কৃষ্ণ'! হ্যাঁ, হাসপাতালের তরফ থেকে জীবন যুদ্ধে জয়ী ওই শিশুটির এই নামকরণই করা হয়েছে।
হাসপাতালের চিকিৎসক সঞ্জয় কালা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, 'হামিরপুরের কাছে রথ এলাকায় একটি ব্রিজ থেকে ছুড়ে ফেলা হয়েছিল ওই শিশুকে। কিন্তু, সেখানে একটি বিরাট গাছ থাকায়, শিশুটি সেই গাছের ডালে আটকে যায়।...'
'...আমরা শিশুটিকে পরীক্ষা করে বুঝতে পারি, গাছে ঝুলন্ত অবস্থাতেই তাকে কাকে ঠোকর মেরেছিল। কোনও একটি পশুর কামড়ও ছিল তার পিঠে। হামিরপুর জেলা হাসপাতাল থেকে শিশুটিকে যখন এখানে রেফার করা হয়েছিল, তখন তার অবস্থা অত্যন্ত সঙ্কটজনক ছিল। শরীরের অন্তত ৫০টি আঘাত ছিল।'
হাসপাতালের এক নার্স জানিয়েছেন, হাসপাতালে নিয়ে আসার পর শিশুটির সারা শরীরে থাকা ক্ষতের চিকিৎসা শুরু করা হয়। তাতে খুব স্বাভাবিকভাবেই ব্যথা হওয়া কথা।
সেই ব্যথায় কষ্ট পেয়ে শিশুটি নাগাড়ে কাঁদত। কিন্তু, তাকে কোলে নেওয়ার উপায় ছিল না। কারণ, তার সারা শরীরে তখনও ক্ষত শুকোয়নি। তখন নার্সরা তাকে গান গেয়ে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করতেন।
সেইসঙ্গে, ব্যথা থেকে কিছুটা আরাম দিতে কর্তব্যরত নার্সরা তার আঘাতগুলিতে খুব আলতোভাবে ফুঁ দিতেন।
শেষমেশ, শিশুটি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠার পর গত ২৪ অক্টোবর তাকে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ও শিশু কল্যাণ কমিটির হাতে তুলে দেওয়া হয়। সেদিন তাঁদের আদরের কৃষ্ণকে কাছছাড়া করতে গিয়ে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা।