দীর্ঘদিন ধরেই অনুপ্রবেশকারীদের চাপে অসমের নাভিঃশ্বাস উঠছে। এরপর অনুপ্রবেশকারীদের এদেশের নাগরিকত্ব দেওয়া হলে নিজভূমেই তো আমরা অস্তিত্ব সংকটের মুখ পড়ব। আমাদের গান, আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের ভাষা, আমাদের রীতিনীতি তো ক্রমশ হারিয়ে যাবে! একজন অহমিয়ার পক্ষে এটা মেনে নেওয়া কখনওই সম্ভব নয়।
তাছাড়াও আর্থ-সামাজিকভাবে খুব একটা ভালো জায়গায় নেই আমরা। আমাদের নিজেদেরই বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। আমরা নিজেদের ভালো থাকার জন্য লড়াই করব না কি পড়শি দেশের লোকের জন্য নিজেদের দরজা খুলে দেব! এটা কি সম্ভব ?

একটি মহল থেকে প্রচার করা হচ্ছে, ধর্মের জন্য আমাদের এই প্রতিবাদ। কিন্তু, ধর্ম নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই। অনুপ্রবেশকারী যে ধর্মেরই হোক না কেন, আমরা আর কোনও বাড়তি ভারে ন্যুব্জ হতে চাই না। আমরা তো অসহায়। যখন আমাদের খাদের কিনারায় ঠেলে দেওয়া হয়, তখন পথে তো নামতেই হবে।
বাবা-মা’র থেকে শুনছি, লখিমপুরে বিক্ষোভ হচ্ছে। পরিস্থিতি একেবারেই প্রশাসনের হাতে নেই। নিজেদের পরিচয় বাঁচিয়ে রাখতে সমাজের সব শ্রেণীর মানুষ পথে নেমেছেন। সে তিনি সরকারি চাকুরে হন বা গায়ক, পড়ুয়া বা অভিনেতা হন। আমাদের পরিচয় তো একজন অহমিয়া হিসেবেই। তারপর তো আমরা অন্য কিছু।

তাঁরা সবাই সরকারের উপর ক্ষুব্ধ। সকলেই জানতে চান, কেন আমাদের এরকম অস্তিত্ব সংকটের মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে? কেন এরকম বলপ্রয়োগ করে স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন আটকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে? কিন্তু, সরকার-প্রশাসন কোনও উত্তর দিচ্ছে না। সবাই চুপ। অথচ রাজ্য সরকারের উচিত কেন্দ্র ও আমাদের মধ্যে মধ্যস্থতা করা। অসমের মানুষের অধিকার, আবেগ, জাত্যাভিমানের প্রতি শ্রদ্ধা বজায় রেখে কোনও সমাধানসূত্র বের করা উচিত। তা না করে হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে রাজ্য সরকার। তাই রাগে ফুঁসছে মানুষ।
আমাদের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালকে আমরা জাতীয় নায়ক হিসেবে দেখতাম। এখন সেই সোনেওয়াল আমাদের চোখে ভিলেন। তিনি নিজে ছাত্রনেতা ছিলেন। তিনি তো জানেন, ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার মানুষের আবেগ। উনি কেন কিছু করছেন না? ফলে রাগ গিয়ে পড়ছে তাঁর দলের নেতাদের উপর।

সংবাদমাধ্যমে দেখছি, কয়েকটি এলাকায় হিংসা ছড়িয়েছে।পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বিধায়কদের বাড়ি। তবে আমার বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, ওরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে প্রতিবাদ করছে। কিন্তু, সরকারের মদতে তৃতীয় পক্ষ হিংসা ছড়াচ্ছে। ওদের উদ্দেশ্য, আন্দোলনের অভিমুখ ঘুরিয়ে দেওয়া। তা হতে দেবে না আমার বন্ধুরা, অসমের মানুষরা। ওদের পাশে রয়েছেন আমার মতো চাকরিসূত্রে বাইরে থাকা অসমের মানুষরা। আমার মতো তাঁরাও নিশ্চয়ই চাইছেন, সব ছেড়ে এক্ষুণি অসমে চলে যাই। নিজের রাজ্য যখন অস্তিত্ব সংকটের মুখে দাঁড়িয়ে তখন কীভাবে আমরা বাইরে থাকতে পারি? মনে হচ্ছে, ছুটে যাই নিজের রাজ্যে, নিজের অস্তিত্ব রক্ষায়।