কেউ কেউ কৃষকদের অধিকারের জন্য উঠে দাঁড়িয়েছেন। কৃষক বিক্ষোভে সমর্থন জানিয়ে আবার পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়েছেন কেউ কেউ। আর ‘সরকারের নিষ্ঠুরতার’ বিরুদ্ধে তিনি নিজের জীবন শেষ করছেন। এমনই চিঠি লিখে বুধবার দিল্লি-হরিয়ানার সিংঘু সীমান্তে গুলি করে আত্মঘাতী হলেন এক শিখ ধর্মগুরু।
হরিয়ানার কার্নাল জেলার সিংঘরা গ্রামের বাসিন্দা বাবা রাম সিং স্থানীয় একটি গুরুদ্বারার প্রধান ছিলেন। হরিয়ানা এবং পঞ্জাবে যথেষ্ট পরিচিতি ছিল। দু'রাজ্যে অসংখ্য অনুগামীও আছেন। আন্দোলনরত কৃষকরা জানিয়েছেন, গত তিনদিন ধরে কুন্দি-সিংঘু সীমান্তে বিক্ষোভস্থলে আসছিলেন বছর ৬৫-র ওই ধর্মগুরু। গত মঙ্গলবার ভারতীয় কিষান ইউনিয়নের (চারুনি) প্রধান গুরনাম সিং চারুনির সঙ্গে দেখা করেছিলেন।
ধর্মগুরুর সহযোগী অমরজিৎ সিং জানান, চরম আত্মবলিদানের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে এই ‘লড়াইয়ে’ কৃষকরা জয় ছিনিয়ে নিতে পারবেন বলে জানিয়েছিলেন তিনি। অমরজিতের কথায়, ‘তারপর বিক্ষোভস্থলের মূল মঞ্চের দিকে চলে যান কৃষকরা। নিজের গাড়িতে বসেই বাবা নিজেকে গুলি করেন। জমায়েত থেকে তাঁকে পানিপথের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু চিকিৎসা চলাকালীন তাঁর মৃত্যু হয়েছে।’
মৃত্যুর পর হাতে লেখা সুইসাইড নোট উদ্ধার করা হয়। তা ওই ধর্মগুরুর হাতে লেখা বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। তাতে লেখা ছিল, ‘কৃষকরা যন্ত্রণায় আছেন। নিজেদের অধিকারের জন্য তাঁরা রাস্তায় প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। যা চরম যন্ত্রণার কারণ। সরকারের তরফে থেকে ন্যায়বিচার মিলছে না। যা নির্মমতা। এই নিপীড়ন মেনে নেওয়া পাপ এবং এই জুলুমও পাপ। কেউ কেউ কৃষকদের অধিকারের স্বপক্ষে এবং (কেন্দ্রের) নির্মমতার বিপক্ষে দাঁড়িয়েছেন। কেউ কেউ প্রতিবাদ জানাতে পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়েছেন। এই সরকারের নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে আমি আত্মহত্যা করছি। এটা নির্মমতার বিরুদ্ধে আওয়াজ এবং কৃষকদের সমর্থনে আওয়াজ।’
সেই সুইসাইড নোটের সত্যতা এখনও স্বীকার করেনি পুলিশ। কুন্দলির স্টেশন হাউজ অফিশার রবি কুমার জানিয়েছেন, ধর্মগুরুর থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করা হয়েছে। সেটির সত্যতা যাচাই করে দেখা হচ্ছে। সোনেপতের পুলিশ সুপার যশনদীপ রানধাওয়া আশ্বাস দিয়েছেন, ‘কুন্দলির পুলিশ এই ঘটনার তদন্ত করে দেখছে। বিস্তারিত তদন্ত করা হবে।’
এদিকে, বৃদ্ধের মৃত্যুর খবর পৌঁছাতে সিংঘরা গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বুধবার সন্ধ্যার দিকে গ্রামে তাঁর মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয়। আপাতত গুরুদ্বারায় দেহ রাখা হয়েছে। বৃহস্পতিবার শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। শেষ শ্রদ্ধা জানাতে কার্নাল এবং আশপাশের জেলা থেকে তাঁর অসংখ্য অনুগামী এসেছেন। তাঁদের অভিযোগ, কৃষকদের সমস্যা সমাধান করেনি নরেন্দ্র মোদী সরকার। তার জেরে চূড়ান্ত পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছেন ধর্মগুরু। তাঁর এক সহযোগী দাবি করেছেন, কৃষিক্ষেত্রের জন্য ধর্মগুরু জীবন উৎসর্গ করেছেন। তা বৃথা যাবে না। অপর এক অনুগামী দাবি করেছেন, কৃষকরা একত্রিত হয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। তাঁদের চাপে নয়া কৃষি আইনগুলি প্রত্যাহার করতে বাধ্য হবে কেন্দ্র।
ধর্মগুরুর আত্মহত্যায় শোকপ্রকাশ করেছেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধীও। তিনি বলেন, ‘মোদী সরকারের নিষ্ঠুরতা সব সীমা পার করে গিয়েছে। একগুঁয়েমি ছাড়ুন এবং কৃষি আইনগুলি প্রত্যাহার করে নিন।’