রান্না করা, সংসারের যাবতীয় দায়িত্ব পালন করা, নিজের শত অসুস্থতা, মন খারাপ সত্ত্বেও সব সময়ে হাসিমুখে সংসারকে আগলে রাখা! এটাই কি একজন মা, একজন স্ত্রী বা একজন মেয়ের প্রাপ্তি?
সম্প্রতি নেটদুনিয়ায় একটি ছবি রীতিমতো ভাইরাল হয়েছে সেখানে দেখা গিয়েছে, একজন মা, যিনি খুবই অসুস্থ, অক্সিজেন চলছে, এই অবস্থায় রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে রুটি করছেন। এই ছবিটির সঙ্গে ক্যাপশনে লেখা, ‘স্বার্থহীন ভালবাসা.. মা… কখনও নিজের কাজ থেকে বিরত হন না।’ মায়েরা তো স্বার্থহীন ভাবেই ভালবাসে, এ কথা কথা কারও অজানা নয়। এই ভদ্রমহিলাও কারও মা। তবে ওঁর মতো ভাগ্যহীনা ক'জন আর রয়েছেন! কেন জানেন?
ভদ্রমহিলার অক্সিজেন চলছে। এই পরিস্থিতিতেও তিনি রান্না করতে বাধ্য হচ্ছেন। অথচ যিনি ছবিটি তুলে গর্বের সঙ্গে সোশ্য়াল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন, তিনি না জানি কত বড় স্বার্থপর! না হলে এমন অসুস্থ অবস্থায় একজনকে কাজ করতে দেখার পরও, ছবি তুলে, সেটি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে, নেটিজেনের বাহবা কোড়ানোর চেষ্টা করতেন না। বরং অসুস্থ মহিলাকে বিশ্রাম নিতে পাঠিয়ে, নিজেই কাজটি করতেন। বা বিকল্প কোনও ব্যবস্থা করতেন! এমনই দাবি তুলেছে সোশ্যাল মিডিয়া।
এ ভাবে আর কতদিন মেয়েদের এমন আত্মত্যাগের প্রতিমূর্তি করে নিজেদের সুবিধেটুকু আদায় করে নেবে এই সমাজ? আর কতদিন মেয়েরা তাঁদের অব্যক্ত যন্ত্রণা, তাঁদের সহ্যশক্তি, তাঁদের আত্মত্যাগের আড়ালেই তিলতিল করে হারিয়ে যাবে? তাঁদের কি কোনও মুক্তি নেই? ছুটি-উৎসব-আনন্দ-দুঃখ-যন্ত্রণা কিচ্ছু থাকতে নেই?
নেটদুনিয়ায় এই ভদ্রমহিলার ছবি ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। অনেক ছেলেই মন্তব্য করেছেন, এটা ভালবাসা নয়, এটা এক প্রকার ক্রীতদাস প্রথা। তবে মেয়েদের দিয়ে ক্রীতদাসের মতো কাজ করিয়ে নেওয়ার প্রথাটা কিন্তু যুগ যুগ ধরেই চলে আসছে। যেন বাড়ির কাজটা করা, একা মেয়েদেরই দায়িত্ব। কোনও ছেলে যদি বাড়ির কোনও কাজ করেন, সে ক্ষেত্রে তাঁর পিঠ চাপড়ে বাহবা দেওয়া হয়। কিন্তু সেই বাড়িরই মেয়ে-বউ যদি বাইরে যত ভালই কাজ করুন, ঘরের কাজ না করেন, সেক্ষেত্রে তাঁর জীবন অতিষ্ট হয়ে উঠবে! ঘরের কাজ তাঁকে করতেই হবে। এই নিয়মের অন্যথা হলে, এই সমাজই তাঁর গায়ে সেঁটে দেবে ‘খারাপ’ মেয়ে বা বউ বা মায়ের তকমা।
মেয়েরা বোধহয় দয়া চান না। করুণাও ভিক্ষে করেন না। তাঁরা শুধু খোলা আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে প্রাণভরে শ্বাস নিতে চান! বন্ধ দরজা-জানলা খুলে বাড়ির ভিতরে আলোর প্রবেশ করাতে চান! চান ভালবাসা আর স্বাধীনতা! চান নিজের মতো করে বাঁচার জন্য কিছু সুন্দর মুহুর্ত! কিন্তু সত্যি কি এই যুগেও মেয়েরা স্বাধীন? সত্যিই কি বাঁচতে পারেন নিজেদের মতো করে? নিজেদের ইচ্ছে মতো? নেটদুনিয়ায় ভাইরাল হওয়া একটি ছবিই ফের সমাজকে এই প্রশ্নগুলির সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।