রবিবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন নোবেলজয়ী প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রপতি জিমি কার্টার। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ১০০ বছর। তাঁর প্রয়াণে শোকস্তব্ধ গোটা বিশ্ব। ভারতের সঙ্গে আমেরিকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ক্ষেত্রে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল। তবে শুধু যে রাজনৈতিক ক্ষেত্রেই তাঁর সম্পর্ক ছিল তা নয়, রাজনীতি ছাড়াও ভারতের সঙ্গে তাঁর গভীর যোগ ছিল। আর সেই সূত্রেই ভারতের একটি আস্ত গ্রামের নামকরণ করা হয়েছে এই প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির নামে।
আরও পড়ুন: প্রয়াত প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট, 'বন্ধু' হারিয়ে শোক প্রকাশ বাইডেনের
হরিয়ানায় অবস্থিত এই গ্রামটির নাম হল কার্টারপুরি। ১৯৭৮ সালে তাঁর ঐতিহাসিক ভারত সফরের পর তাঁর সম্মানে গ্রামটির নাম পরিবর্তন করা হয়। কার্টার ছিলেন প্রথম আমেরিকান রাষ্ট্রনেতা যিনি জরুরি অবস্থার পর এবং ১৯৭৭ সালে জনতা পার্টি জয়ী হওয়ার পর ভারত সফর করেন। সেই সময় তিনি সংসদেও ভাষণ দেন। কার্টার বলেছিলেন, ‘ভারতের সাফল্য এই তত্ত্বকে চূড়ান্তভাবে খণ্ডন করে যে একটি উন্নয়নশীল দেশকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতি অর্জনের জন্য কর্তৃত্ববাদী বা সর্বগ্রাসী শাসন মেনে নিতে হবে।’ তিনি ভারতের নির্বাচনী গণতন্ত্রের প্রশংসা করে বলেছিলেন, ‘পৃথিবীর বৃহত্তম নির্বাচকমণ্ডলী অবাধে এবং বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে ভোটে নেতাদের বেছে নিয়েছে। গণতন্ত্র নিজেই বিজয়ী হয়েছে।’ পরের দিন কার্টার এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাই দিল্লি ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন। এরফলে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়। পরে রাষ্ট্রপতি ভবনে বক্তৃতা রাখার সময়, কার্টার গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের প্রতি মূল্যবোধকে তুলে ধরেছিলেন।
সেখানে বক্তৃতা রাখার পরে দিল্লির অদূরে দৌলতপুর নাসিরাবাদ গ্রামে সফরের সময় ভারতের সঙ্গে কার্টারের সংযোগ আরও গভীর হয়। তিনি স্ত্রী রোজালিনের সঙ্গে ওই গ্রামে গেলে গ্রামবাসীরা তাঁদের উষ্ণ স্বাগত জানান। সেই গ্রামেরই নাম পরিবর্তন করে কার্টারপুরি করা হয়। কিন্তু, ওই গ্রামে কেন গিয়েছিলেন কার্টার? আসলে কার্টারের মা লিলিয়ান কার্টার ১৯৬০ এর দশকে ভারতে পিস কর্পস স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে কাজ করেছিলেন। আর ওই গ্রামে তিনি দীর্ঘসময় কাটিয়েছেন। সেই জন্য ভারত সফরে এসে ওই গ্রামে ছুটে গিয়েছিলেন কার্টার। গ্রামের নাম পরিবর্তন করায় খুশি হয়েছিলেন গ্রামবাসীরা। খোদ প্রাক্তন প্রেসিডেন্টও খুশি হয়েছিলেন। এরফলে ভারতের সঙ্গে কার্টারের আরও গভীর সংযোগ গড়ে ওঠে। ২০০২ সালের ৩ জানুয়ারি যখন কার্টার শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন সেই গ্রামের মানুষও আনন্দে সামিল হয়েছিলেন। আর প্রতি বছর ৩ জানুয়ারি সেই গ্রামে ছুটি আজও পালন করা হয় ।