বড়সড় দুর্নীতির অভিযোগ উঠল পঞ্জাবে। একটি গ্রামের জন্য বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ৪৩ লক্ষ টাকা বরাদ্দ পেয়েছে। অথচ পুরো গ্রামটির কোনও অস্তিত্বই নেই। আর সেখানেই কেলেঙ্কারির বিষয়টি সামনে এসেছে। ২০১৮-১৯ সালে এই গ্রামের উন্নয়নের জন্য এই পরিমাণ অর্থ খরচ করা হয়েছিল। বিষয়টি সামনে আসতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে। এই ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: বাংলার আবাস থেকে প্রকৃত উপভোক্তাদের নাম বাদ, ২ সরকারি কর্মীর বিরুদ্ধে থানায় BDO
সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পঞ্জাবের যে গ্রামের জন্য ৪৩ লক্ষ টাকা উন্নয়ন প্রকল্পে খরচ করার কথা বলা হয়েছে সেই গ্রামটির নাম হল ‘নিউ গাট্টি রাজো কি’। সরকারি নথিপত্র হিসেবে এই গ্রামের অবস্থান দেখানো হয়েছে ফিরোজপুরের ভারত-পাক আন্তর্জাতিক সীমান্তের জিরো লাইনের কাছে। তবে গুগল ম্যাপও এই গ্রামটি শনাক্ত করতে পারছে না। দুর্নীতির এই উদ্ভট ঘটনাটি ফিরোজপুর জেলার এডিসি উন্নয়ন অফিসে প্রকাশ্যে এসেছিল। সেখানে কর্মকর্তারা কাগজে গ্রামটি তৈরি করেছেন এবং উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ৪৩ লক্ষ টাকারও বেশি মঞ্জুর করেছেন। বিষয়টি এখন সামনে আসার সঙ্গে সঙ্গে পুরো কেলেঙ্কারি ফাঁস করার চেষ্টা চলছে।
জানা গিয়েছে, এবিষয়ে আরটিআই করেছিলেন পিয়ার ইসমাইল খান গ্রামের বাসিন্দা এবং ব্লক সমিতির সদস্য গুরদেব সিং। তিনি জানিয়েছেন, দীর্ঘ পরিশ্রমের পর তিনি পঞ্জাব সরকারের কাছ থেকে এই গ্রামের পঞ্চায়েত সম্পর্কে তথ্য পেয়েছিলেন। তখন জানা যায়, নিউ গাট্টি রাজো কি নামে একটি গ্রামের জন্য একটি পৃথক পঞ্চায়েত তৈরি করা হয়েছে। এরপর গ্রামের উন্নয়নের জন্য অর্থ বরাদ্দ নিয়ে আরটিআই করতেই এই তথ্য বেরিয়ে আসে। ঘটনায় সরকারি আধিকারিকদের জড়িত থাকার অভিযোগ সামনে এসেছে। অভিযোগ, এই গ্রামের পঞ্চায়েত যখন গঠিত হয় তখন ফিরোজপুরের বিডিপিও অফিসের কিছু আধিকারিক এবং স্থানীয় এডিসি উন্নয়ন অফিসের কর্মীদের নিয়ে একই নামে একটি জাল পঞ্চায়েত গড়ে তোলেন বলে অভিযোগ। আসল পঞ্চায়েত কম অনুদান পেলেও ওই গ্রামটি পেয়েছে প্রায় দ্বিগুণ।
আরটিআই তথ্য অনুসারে, যেখানে অন্য গ্রামের জন্য ৮০টি মানরেগা জব কার্ড তৈরি করা হয়েছে সেখানে ওই নকল গ্রামটির জন্য ১৪০টি জাল জব কার্ড তৈরি করা হয়েছে৷ অন্য গ্রামে যেখানে ৩৫টি উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে সেখানে অস্তিত্বহীন নিউ গাট্টি রাজো কি গ্রামের জন্য ৫৫টি প্রকল্প কাগজে-কলমে করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে- আর্মি বাঁধ পরিষ্কার করা, গবাদি পশুর আশ্রয় স্থল, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পার্ক, ইন্টারলকিং টাইলস, গ্রামের রাস্তা এবং আরও অনেক কিছু। মোট কেলেঙ্কারির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৩ লক্ষ টাকা।
গুরদেব সিং আরও জানিয়েছেন, আরটিআই তথ্য পাওয়ার পর তিনি ফিরোজপুরের প্রাক্তন ডেপুটি কমিশনারের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। তবে কমিটির প্রতিবেদন চূড়ান্ত হওয়ার আগেই ওই কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়। পরে ফিরোজপুরের ডেপুটি ডিরেক্টর পঞ্চায়েত অফিসারের (ডিডিপিও) কাছে অভিযোগ জানাতে গেলে তিনি অভিযোগ নিতে চাননি।
ফিরোজপুরের জেলা প্রশাসক দীপশিখা শর্মা জানিয়েছেন, এই বিষয়ে একটি রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে এবং আশ্বাস দিয়েছেন যে সরকারি তহবিল অপব্যবহারে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি সরকারি কর্মচারীদের গ্রামের পাঞ্জাবি এবং ইংরেজি নামের মধ্যে বিভ্রান্তির জন্য সমস্যাটিকে দায়ী করেছেন। একইসঙ্গে তিনি দাবি করেন, যে অনুদান সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। তবে, পঞ্জাবি-নাম এবং ইংরেজি-নাম থাকা গ্রামগুলির জন্য কীভাবে আলাদাভাবে অনুদান মঞ্জুর করা হয়েছিল তা তিনি স্পষ্ট করতে পারেননি। অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার লখবিন্দর সিং বলেছেন যে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দোষী প্রমাণিত ব্যক্তির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।