স্বামী শিক্ষিত ও যোগ্য। তারপরও স্ত্রী'কে খোরপোষ না দেওয়ার জন্য যদি তিনি কাজ না করে বাড়িতে চুপচাপ বসে থাকেন, তাহলে সেটা সভ্য সমাজে মোটেও কাম্য বলে বিবেচনা করা হবে না। বিষয়টি সভ্য সমাজে একেবারেই কাঙ্খিত নয়। এমনই মন্তব্য করল ওড়িশা হাইকোর্ট। সেইসঙ্গে এক মহিলা ও তাঁর সন্তানকে খোরপোষ প্রদানের নির্দেশের বিরুদ্ধে যে আবেদন দাখিল করা হয়েছিল, তা খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্টের বিচারপতি গৌরীশংকর শতপথী। হাইকোর্টের মতে, বেকার থাকা একটা আলাদা বিষয়। কিন্তু শিক্ষিত এবং যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও বাড়িতে বসে থাকার বিষয়টা অন্য জিনিস। যদি যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও স্ত্রীয়ের খোরপোষের দায়িত্ব এড়ানোর জন্য কোনও কাজ না করে বসে থাকেন এবং আশা করেন যে সুবিধা পাবেন, তাহলে সেটাকে আদর্শ বলে বিবেচনা করা হবে না।
মহিলা স্কুলের শিক্ষিকা, আবেদন করেন ডিভোর্সের
আর যে মামলার প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট এরকম নির্দেশ দিয়েছে, সেটার আইনি লড়াই শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালে। হিন্দু বিবাহ আইনের ১১ ধারা এবং ১২ ধারার আওতায় ফ্যামিলি কোর্টে ডিভোর্সের মামলা দায়ের করেন ওড়িশার এক স্কুল শিক্ষিকা। সেইসঙ্গে ২৪ ধারার আওতায় খোরপোষ প্রদানেরও আর্জি জানান। সেই মামলার শুনানির সময় শিক্ষিকা জানিয়েছিলেন, তাঁর মাসিক আয় হল ২৩,৩৩৪ টাকা। তাঁর স্বামী কোনও কাজ করছেন না। কর্মহীন আছেন। আর ২০২৩ সালের ১ মার্চ থেকে আয়ের কোনও উৎস নেই।
মাসিক ১৫,০০০ টাকা খোরপোষ প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল!
সেই প্রেক্ষিতে ফ্যামিলি কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল যে অন্তর্বর্তী খোরপোষ হিসেবে মহিলা এবং সন্তানকে প্রতি মাসে ১৫,০০০ টাকা দিতে হবে। যা ২০১৭ সালের ২২ এপ্রিল থেকে কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। আর সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা করেন স্বামী। ওই মামলার শুনানির সময় হাইকোর্টের গোচরে এই বিষয়টি আনা হয় যে ওই ব্যক্তির বিই ডিগ্রি (পাওয়ার ইলেকট্রনিকস) আছে। অতীতে কাজও করতেন।
কোন প্রবণতাকে নিন্দা করতে হবে? বলল হাইকোর্ট
ওই পরিস্থিতিতে ২০২৪ সালে সুপ্রিম কোর্টের রায় উল্লেখ করে হাইকোর্ট জানিয়েছে, সঙ্গী যদি উচ্চশিক্ষিত হয়ে থাকেন এবং জীবনযাপনের মাপকাঠি পূরণের জন্য কোনও চেষ্টাও না করেন, তাহলে সেই ব্যাপারটাকে মোটেও বাহবা দেওয়া উচিত নয়। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কোনওরকম চেষ্টা ছাড়াই নিজের কর্মহীন হিসেবে প্রতিপন্ন করার বিষয়টি নিন্দা করতে হবে বলেও জানিয়েছে হাইকোর্ট। সেইসঙ্গে খারিজ করে দিয়েছে ওই ব্যক্তির আবেদন।