১৯৫৭ সালের পরে গুরুত্ব হারায় সংবিধানের ৩৭০ ধারা। বুধবার সুপ্রিম কোর্টে এই ধারা বাতিল করার বিরুদ্ধে সওয়াল করতে গিয়ে এমনই দাবি জানালেন বিবাদী পক্ষের আইনজীবী সঞ্জয় পারেখ।
সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা খারিজের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে জমা পড়া আবেদনের শুনানি চলেছে সুপ্রিম কোর্টে। প্রাক্তন কূটনীতিক অধুনা রাজনীতিক শাহ ফয়জল, শেহলা রশিদ-সহ অন্যান্যদের আবেদনের শুনানি চলেছে পাঁচ সদস্যের সুপ্রিম কোর্ট বেঞ্চে। বেঞ্চে রয়েছেন এনভি রামান্না বিচারপতি এস কে কাউল, বিচারপতি আর সুভাষ রে়ড্ডি, বিচারপতি বি আর গাভাই ও বিচারপতি সূর্যকান্ত।
মঙ্গলবার এক আবেদনকারীর তরফে আইনজীবী দীনেশ দ্বিবেদী আর্জি জানান, মামলার শুনানি বৃহত্তর বেঞ্চে পাঠানো হোক। তাঁর যুক্তি, পাঁচ সদস্যের বেঞ্চে ইতিমধ্যেই দু’টি রায়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেওয়ায় বৃহত্তর বেঞ্চেই শুনানি হওয়া প্রয়োজন।
জবাবে বিচারপতিরা জানান, প্রথমে আবেদনের প্রেক্ষিতে বিবাদী পক্ষের সওয়াল শোনা হবে, তারপরে মামলাটি প্রয়োজনে বৃহত্তর বেঞ্চে রেফার করা যেতে পারে।
বুধবার ৩৭০ ধারা বাতিলের বিরুদ্ধে আবেদনকারীদের তরফে আইনজীবী সঞ্জয় পারেখ দাবি করেন, সংবিধান থেকে কোনও ধারা বাদ দেওয়ার ক্ষমতা শুধুমাত্র সংবিধান পরিষদেরই রয়েছে।
তাঁর যুক্তি শুনে বিচারপতি রামান্না প্রশ্ন করেন, ‘আপনার মতে জম্মু ও কাশ্মীরের সংবিধান প্রণয়নের পরে আদালতের দেওয়া প্রতিটি রায় কি অবৈধ?’
বিচারপতি কাউল বলেন, ‘এই যুক্তির পিছনে একটি প্রশ্ন দেখা যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, যতক্ষণ না প্রমাণিত হচ্ছে যে সংবিধান পরিষদের বিতর্কে জনপ্রতিনিধিরা এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সব রকম চেষ্টা করেছিলেন, তত ক্ষণ পর্যন্ত পারেখের বক্তব্য যুক্তিগ্রাহ্য বলে বিবেচিত হবে না।
পালটা যুক্তি দিয়ে পারেখ বলেন, সংযোজন প্রক্রিয়ায় উল্লেখ করা বিষয়গুলি সংবিধান পরিষদের অনুমোদন সাপেক্ষ। তিনি বলেন, জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্য প্রশাসনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
এই যুক্তি শুনে বিচারপতি রামান্না আইনজীবী পারেখকে ৩৭০ ধারা সংক্রান্ত বিতর্ক ছেড়ে বর্তমানে আলোচিত বিষয়ে মনোনিবেশ করতে বলেন। তাতে পারেখ দাবি করেন, সংবিধানের ধারা পরিবর্তন বা বাতিল করার বিষয়ে সংবিধান পরিষদের আগাম অনুমোদন আবশ্যিক।
বিচারপতি কাউল প্রশ্ন করেন, যদি সংবিধান পরিষদের অস্তিত্বই না থাকে? তিনি বলেন, সংবিধানের ধারা পরিবর্তন বা বাতিলের ক্ষেত্রে সংবিধান পরিষদের অনুমোদন তখনই সম্ভব যখন পরিষদ বহাল থাকে।
এতে পারেখ মন্তব্য করেন, ‘১৯৫৭ সালের পরে ৩৭০ ধারা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে।’
বিচারপতি কাউল জানতে চান, ‘আপনি কি বলতে চান, ৩৭০ দারার শুধুমাত্র ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে?’ জবাবে পারেখ বলেন ‘হ্যাঁ, ধর্মাবতার।’
এর পরেই মধ্যাহ্নভোজের জন্য শুনানি মুলতুবি ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ।