ক্রমবর্ধমান ঋণের বোঝা। আর সেই ঋণ নিতে সংস্থারই শেয়ারকে কাজে লাগিয়েছে আদানি গোষ্ঠী। ফলে ঋণখেলাপি হলে গোটা সংস্থাগুলিই টলে যেতে পারে। মার্কিন বাজার গবেষণা সংস্থা Hindenburg রিসার্চের বুধবারের রিপোর্ট প্রকাশ হতেই বাজার টালমাটাল। হু-হু করে পড়েছে আদানি গোষ্ঠীর বিভিন্ন সংস্থার শেয়ার দর। হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ জানিয়েছে মার্কিন-ট্রেডেড বন্ড এবং নন-ইন্ডিয়ান-ট্রেডেড ডেরিভেটিভ ইন্সট্রুমেন্টের মাধ্যমে ভারতের আদানি গ্রুপে তাদের শর্ট পজিশনে রয়েছে। সংস্থার পতে, আর্থিকভাবে বেশ ‘চাপের’ পরিস্থিতিতে রয়েছে আদানি গোষ্ঠী। অঘটন ঘটতেই পারে।
আদানি গোষ্ঠীর বর্তমানে মোট ৭টি সংস্থা শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে। অত্যন্ত চড়া ভ্যালুয়েশনের কারণে সংস্থাগুলির শেয়ারে প্রায় ৮৫% নেতিবাচক প্রবণতা রয়েছে বলে উল্লেখ করেছে হিন্ডেনবার্গ। আরও পড়ুন: সাতে শেষ নয়, আরও বেশি সংখ্যক বিমানবন্দর পরিচালনা করতে চায় আদানি গোষ্ঠী
এই অতিরিক্ত ভ্যালুয়েশনের শেয়ারকেই সিকিউরিটি হিসাবে বন্ধক ধরে ঋণ নেওয়া হয়েছে। ফলে সম্পূর্ণ সংস্থাই বর্তমানে আর্থিকভাবে একটি স্পর্শকাতর পর্যায়ে রয়েছে বলে উল্লে করা হয়েছে হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টে।
গত বছর, ২০২২ সালে আদানি এন্টারপ্রাইজেসের শেয়ার প্রায় ১২৫% বেড়েছে। এর ফলে বিশ্বের তৃতীয় ধনীতম ব্যক্তির আসনে চলে আসেন গৌতম আদানি। গ্রুপের অন্য সংস্থাগুলির শেয়ারও প্রায় ১০০% চড়েছে।
এদিকে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ঋণও। ২০২১-২২ ত্রৈমাসিকে আদানি গ্রুপের মোট ঋণের অঙ্ক প্রায় ২.২ লক্ষ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। প্রায় ৪০% বেড়েছে ঋণ। গত বছর সেপ্টেম্বরে এই বিপুল ঋণের অঙ্ক নিয়ে চিন্তা প্রকাশ করে বিশ্লেষক সংস্থা CreditSights ।
বুধবারের রিপোর্টের পরপরই আদানি গোষ্ঠীর বেশ কিছু সংস্থার শেয়ার দ্রুত হারে নিম্নমুখী হয়েছে।
এক নজরে দেখুন, এদিন একদিনে কোন সংস্থার শেয়ার কতটা কমে ক্লোজ হয়েছে:
- আদানি গ্রিন এনার্জি: ২.৩৪% (১,৮৭২ টাকা)
- আদানি ট্রান্সমিশন: ৮.০৮% (২,৫৩৯ টাকা)
- আদানি পাওয়ার: ৪.৯৫% (২৬১.০৫ টাকা)
- আদানি পোর্টস অ্যান্ড স্পেশাল ইকোনমিক জোন: ৬.১৩% (৭১৪.৫৫ টাকা)
- আদানি এন্টারপ্রাইজেস: ১.০৭% (৩,৪০৫ টাকা)
- আদানি উইলমার: ৪.৯৯% (৫৪৪.০৫ টাকা)
- আদানি টোটাল গ্যাস: ৩.৯০% (৩,৭৪০ টাকা)
আদানি গোষ্ঠীর প্রতিক্রিয়া:
এই বিষয়ে সংস্থার চিফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার যুগেশিন্দর সিং বলেন, 'হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ না করেই বা বাস্তব পরিসংখ্যান যাচাই না করেই একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। আমরা হতবাক। এগুলি আসলে সম্পূর্ণ ইচ্ছাকৃত ভুল, ভিত্তিহীন তথ্য। ভারতের সর্বোচ্চ আদালতও আগে তা স্পষ্ট করেছে এবং এই জাতীয় দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে।
এর আগেও আদানি গোষ্ঠী বারবার ঋণের বোঝায় ডুবে যাওয়ার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছে। সম্প্রতি এক টিভি শো-তে গৌতম আদানি বলেন, 'আমাদের ঋণ পরিশোধের ইতিহাস যদি দেখেন, কোথাও খারাপ রিপোর্ট দেখবেন না। নিয়মিত ঋণের টাকা শোধ করতে বদ্ধপরিকর আমরা।' আরও পড়ুন: ধনীদের তালিকায় পিছিয়ে গেলেন আদানি, এখন কত নম্বরে?
গত ২১ জানুয়ারিও এই বিষয়ে অভয় দেন সংস্থার CFO। তিনি দাবি করেন, 'আমাদের ঋণ নিয়ে কেউ কখনও দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেনি। কোনও বিনিয়োগকারীই এমন কিছু বলেননি।' আদানি এন্টারপ্রাইজেসের অধীনে বন্দর, বিদ্যুত্ উত্পাদনের মতো ব্যবসাগুলি রয়েছে। সংস্থা জানিয়েছে, দ্বিতীয় দফার পাবলিক অফারিংয়ের মাধ্যমে আরও ২.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার তুলতে চলেছে তারা। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ১৬,০০০ কোটি টাকা।
এই খবরটি আপনি পড়তে পারেন HT App থেকেও। এবার HT App বাংলায়। HT App ডাউনলোড করার লিঙ্ক https://htipad.onelink.me/277p/p7me4aup