করোনায় মা-বাবা দু'জনকেই হারিয়েছিল বনিশা। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে পড়াশোনাকে আরও বেশি করে আঁকড়ে ধরে বছর ষোলোর মেয়েটি। সবাইকে তাক লাগিয়ে ২০২১ সালের CBSE পরীক্ষায় মধ্যপ্রদেশে প্রথম স্থান দখল করে বনিশা পাঠক(খবরটি পড়তে ক্লিক করুন)। প্রমাণ করে দেয় যে, মনের জোর, বুদ্ধি ও পরিশ্রম করার শক্তি থাকলে সবই সম্ভব।
৯৯.৮% নম্বর পেয়েছিল ভোপালের এই স্কুলছাত্রী। মা-বাবার স্বপ্ন পূরণ করতেই এই লড়াই, জানিয়েছিল সে। কিন্তু তাঁদের অকাল প্রয়াণে আর্থিক সমস্যায় পড়ে যায় সে। তাদের বাড়ির ঋণের EMI চলছিল। LIC হাউজিং ফাইন্যান্স থেকে ঋণ নিয়েছিলেন বনিশার বাবা। সেই ধার মেটাতে না পারায় বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার নোটিশ আসছিল বনিশার কাছে। বছর ষোলোর একটি মেয়ে, সে কীভাবে একগুলো টাকা জোগাড় করবে বুঝতে পারছিল না। মধ্যবিত্ত আত্মীয়রা বনিশার দেখভাল করছেন বটে। কিন্তু তাঁদের পক্ষেও EMI-এর এতগুলো টাকা দেওয়া কার্যত অসম্ভব। আরও পড়ুন: চার বছরের মনুশ্রীর হার্ট অস্ত্রোপচারের খরচ দেবেন গৌতম আদানি
বনিশার এই পরিস্থিতি উঠে আসে একাধিক প্রথম সারির সংবাদমাধ্যমে। আর তার দৌলতেই বিষয়টি নজরে আসে সিরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ার CEO আদার পুনাওয়ালার। দেশের অন্যতম ধনী ব্যক্তি তিনি। সিরাম ইনস্টিটিউট বিশ্বের বৃহত্তম টিকা নির্মাতা। করোনা টিকা কোভিশিল্ডেরও উত্পাদক এই সংস্থা।
খবরটি জানার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির ঋণ মিটিয়ে দেওয়ার জন্য বনিশার সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁর দাতব্য সংস্থা। এদিকে বনিশার তখনও ১৮ বছর হয়নি। প্রাপ্ত বয়স্ক না হওয়ায় তার আইনত কোনও অভিভাবক ছিল না। সেই আইনি জটিলতার কারণে বাড়ির ঋণ শোধ করতে পারছিলেন না আদার পুনাওয়ালা।
বিষয়টি নজরে আসে খোদ দেশের অর্থমন্ত্রীরও। নির্মলা সীতারামন নিজে LIC-কে এই বিষয়ে জানান। তার পরিস্থিতি যাতে সহমর্মিতার সঙ্গে দেখা হয়, সেই বিষয়ে অনুরোধ করেন তিনি। সেই মতো বাড়ি দখলদারি প্রক্রিয়া স্থগিত রাখে LIC হাউজিং ফাইন্যান্স লিমিটেড।
তবে এখন আর চিন্তা নেই। গত নভেম্বরে বনিশা ১৮ বছর বয়সে পা দিয়েছে। আর তার পরেই সিরাম কর্তা এগিয়ে আসেন। পুনাওয়ালা গোষ্ঠীর দাতব্য সংস্থা মারফত তাদের ২৭.৪ লক্ষ টাকা বকেয়া ঋণ মিটিয়ে দেন আদার পুনাওয়ালা। ফলে মাথার তলায় ছাদটুকু নিয়ে অন্তত আর চিন্তা করতে হবে না বনিশাকে। আরও পড়ুন: মাঠের বাইরে নায়ক কেএল রাহুল! শিশুর চিকিৎসার জন্য ৩১ লক্ষ টাকা দান
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বনিশা বলেন, 'আমি পুনাওয়ালাজিকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। তাঁদের এই সাহায্যের কারণেই আমি আমাদের বাড়িটা বাঁচাতে পেড়েছি। মা-বাবাকে হারানোর পর এটুকুই আমাদের(বনিশা ও তার ভাই) সম্বল ছিল। আমরা সর্বদা কৃতজ্ঞ থাকব।'