খাদ্যের সন্ধানে বেরিয়ে ট্রেনের সঙ্গে ধাক্কায় ওড়িশার সম্বলপুরে মারা গেল পূর্ণবয়স্ক এক দাঁতাল হাতি। অল্পের জন্য দুর্ঘটনা এড়ালেন ট্রেনযাত্রীরা।
ইস্ট কোস্ট রেলওয়ে আদিকারিকরা জানিয়েছেন, রবিবার রাত ২টো নাগাদ সম্বলপুর ডিভিশনেরহাতিবাড়ি ও মানেশ্বর রেল স্টেশনের মাঝে ভবানীপল্লি গ্রামের কাছে তীব্র গতিতে ছুটে চলা পুরী-সুরাট এক্সপ্রেসের সঙ্গে হাতিটির সংঘর্ষ হয়। সংঘাতের জেরে লাইনচ্যুত হয় ট্রেনের ইঞ্জিন। তবে বেঁচে গিয়েছেন ইঞ্জিনচালক-সহ রেলকর্মী ও যাত্রীরা।
সূত্রে খবর, রেল লাইন অতিক্রম করার সময় ঘণ্টায় ৫০ কিমি গতিতে ছুটে চলা ট্রেনের সামনে পড়ে যায় পুরুষ হাতিটি। দুর্ঘটনার পরে রেল লাইনের আশপাশে হাতির শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ছিটকে পড়ে।
সম্বলপুরের বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার প্রদীপ কুমার জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার জেরে ওই লাইনে বেশ কিছু ক্ষণ ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হয়। তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একটি রিলিফ ট্রেন ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুরী-সুরাট এক্সপ্রেসের কামরাগুলিকে টেনে হাতিবাড়ি স্টেশনে পৌছে দেয়। দুর্ঘটনার জেরে ওই রুটে কমপক্ষে দুটি ট্রেনকে মাঝপথে থামিয়ে দেওয়া হয়।’
সম্বলপুরের বিভাগীয় বনাধিকারিক সঞ্জিত কুমার বলেন, ‘নির্ধারিত গতিবেগের চেয়ে দ্রুত ছুটছিল এক্সপ্রেস ট্রেনটি। হাতি চলাচল সম্পর্কে রেল কর্তৃপক্ষকে আগেই সাবধান করা হয়েছিল। রেল লাইনের পাশে সাইনবোর্ডে ওই এলাকায় হাতি চলাচল সম্পর্কে সতর্কবার্তা রয়েছে। কোন পরিস্থিতিতে দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা অনুসন্ধান করা হচ্ছে।’
প্রসঙ্গত, চলতি মাসে এই নিয়ে দ্বিতীয় বার চলন্ত ট্রেনের সঙ্গে সংঘাতে হাতির মৃত্যু হল। গত ৫ ডিসেম্বর সম্বলপুর জেলায় একটি বছর বারোর দাঁতাল এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কায় মারা যায়। গত ১০ বছরে ওড়িশায় ট্রেনের ধাক্কায় মোট ২৮টি হাতির মৃত্যু হয়েছে।
বন্যপ্রাণ আন্দোলনকর্মী বিশ্বজিৎ মোহান্তির মতে, ‘যদি ঘণ্টায় ৫০ কিমি গতিতে একটি ট্রেন আঘাত করে, তা হলে হাতির বাঁচার কোনও আশা থাকে না। প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, ট্রেনচালক গতিবেগ বিধি লঙ্ঘন করেছিলেন। বন দফতরের উচিত, দায়িত্ব নির্ধারণ করে রেল কর্মীদের ভ্রান্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা করা।’
গত ১ এপ্রিল থেকে এখনও পর্যন্ত ওড়িশায় মোট ৪৭টি হাতি তড়িদাহত হয়ে, ট্রেনের ধাক্কায় এবং চোরা শিকারিদের নিশানায় পড়ে প্রাণ হারিয়েছে। পাশাপাশি, মানুষের সঙ্গে হাতির ১২২টি সংঘর্ষে মারা গিয়েছেন ৭০ জন, আহত হয়েছেন ৭৬জন। বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, আসন্ন ফসল কাটার মরশুমে আরও বেশ কিছু হাতি ও মানুষের প্রাণহানি হতে পারে।