মঙ্গলবার রাতে পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে নতুন করে সংঘর্ষ শুরু হয়েছে বলে দাবি করা হল। এই সংঘর্ষে কমপক্ষে ১৫ আফগান নাগরিক এবং পাকিস্তানি আধাসামরিক বাহিনীর ৬ জন নিহত হয়েছে। রয়টার্স জানিয়েছে যে আফগান সীমান্তের কাছে সংঘর্ষে এই পাকিস্তানি জওয়ানরা নিহত হয়েছে। আফগান কর্মকর্তারা বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন যে দুই দেশের সীমান্তে নতুন করে সহিংসতায় ১৫ জন নাগরিক নিহত এবং কয়েক ডজন আহত হয়েছে। এরই মধ্যে তালিবানের তরফ থেকে সারি দিয়ে থাকা পাক সেনাদের মৃতদেহের ভিডিয়ো প্রকাশ করা হয়েছে। এদিকে তালিবানের তরফ থেকে পাক সীমান্তে ট্যাঙ্ক পাঠানো হচ্ছে বলেও দাবি করা হয়েছে রিপোর্টে।
এদিকে পাকিস্তান জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে আফগান বাহিনী ও স্থানীয় জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায় পাক সেনা। তালিবানের তরফ পাকিস্তান লক্ষ্য করে গোলাবর্ষণ শুরু হয়। এর পাল্টা জবাব দিতে সীমান্ত পেরিয়ে আফগানিস্তানে ঢোকে পাক সেনাবাহিনী। উল্লেখ্য, তালিবানের বিদেশমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি ভারতে পা রাখার দিন থেকেই আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। মুত্তাকির দিল্লি সফরের দিনেই পাক সংসদে দাঁড়িয়ে আফগানিস্তানকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ।
জানা যায়, গত ৯ অক্টোবর মধ্যরাতের দিকে কাবুলের পূর্বাঞ্চলে শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটে। এরপর পাক সীমান্তে সেনা আউটপোস্টে পালটা হামলা চালায় আফগনরা। সেই হামলায় পাকিস্তানের ৫৮ সেনা জওয়ান নিহত বলে দাবি করে তালিবান। এদিকে পাক সেনা দাবি করে, তাদের ২৩ জন জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে আফগানিস্তানের রাস্তায় পাকিস্তানি সেনার উর্দির প্যান্ট ঝুলিয়ে রাখার ছবি ও ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছে এই সংঘর্ষের সময়। এদিকে বহু পাকিস্তানি সেনাকে তালিবানরা আটক করেছে। সেই সব বন্দি পাক সেনার ভিডিয়োও প্রকাশ্যে আসে।
উল্লেখ্য, ডুরান্ড লাইন বরাবর পাকিস্তানি ও আফগান সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষের কেন্দ্রে রয়েছে 'তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান' (টিটিপি)। এদিকে তালিবানের অভিযোগ, পাকিস্তান সরকার এবং সেনা ইসলামিক স্টেটের মতো জঙ্গি সংগঠনকে সাহায্য করছে। এদিকে পাকিস্তানের অভিযোগ, আফগানের তালিবান সরকার টিটিপি সদস্যদের আশ্রয় দিচ্ছে, যারা পাকিস্তানে হামলা করছে। ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে বাইতুল্লাহ মেহসুদের নেতৃত্বে পাকিস্তানের ফেডারেল শাসিত উপজাতি এলাকার বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীকে একত্র করে টিটিপি গঠিত হয়। এই গোষ্ঠীকে আন্তর্জাতিকভাবে একটি সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। আল-কায়েদা জঙ্গিদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানি সামরিক অভিযানের প্রতিক্রিয়া হিসেবে এর জন্ম। বর্তমানে টিটিপির মূল লক্ষ্য হল পাকিস্তানের সরকারকে সরিয়ে তাদের নিজস্ব মতাদর্শে একটি ইসলামি শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা।