ইতিমধ্যেই ভারতের প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কা প্রবল আর্থিক কষ্টের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। খাদ্য থেকে শুরু করে একাধিক নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস, জ্বালানি ঘিরে সেদেশে সংকট দেখা দিয়েছে। বিদেশী ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে মুখ থুবড়ে পড়েছে কলম্বো। এদিকে,তারই মাঝে নেপালে নতুন করে আর্থিক সংকট উঠে আসার উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যেই কাঠমান্ডু সোনা, গাড়ি, প্রসাধনীর আমগানী ঘিরে কোমর কষেছে, রাতারাতি সাসপেন্ড করা হয়েছে সেদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের গভর্নরকে।
নেপাল তার ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভকে সুরক্ষিত রাখতে আমদানীর ওপর লাগু করেছে কিছু বিধি। উল্লেখ্য, কোভিডের জেরে গত ২ বছরে হিমালয়ের কোলে অবস্থিত এই দেশ পর্যটনের ক্ষেত্রে বড়সড় চ্যালেঞ্জে পড়ে যায়। সেই জায়গা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি নেপালের অর্থব্যবস্থা। এরপরই ধীর ধীরে পর্যটন শিল্পে ধাক্কা খাওয়া নেপালে আর্থিক সংকট দানা বাঁধতে থাকে। প্রসঙ্গত, শ্রীলঙ্কাতেও কোভিডের জেরে পর্যটনের ক্ষেত্রে বড় ঘাটতি দেখা গিয়েছিল, তারপরই সেদেশের অর্থব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। প্রশ্ন উঠছে, এবার কি তাহলে শ্রীলঙ্কার পথেই যাচ্ছে নেপালও? উল্লেখ্য, কোভিডের জেরে ২ বছর বিভিন্ন সমস্যা কাটিয়ে নেপাল সবে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি তাঁদের ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভ পড়ে যায় ৯.৭৫ বিলিয়নে। গত বছরের জুলাইয়ের মাঝামাঝির তুলনায় তা ১৭ শতাংশের পতনের মুখ দেখে।
নেপালের রাষ্ট্রব্যাঙ্ক জানাচ্ছে, দেশের ফরেন এক্সচেঞ্জ চাপে রয়েছে। তারা বলছে, 'অপ্রয়োজনীয় জিনিসের আমদানী রুখে প্রয়োজনীয় জিনিসের সরবরাহ চালিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।' জানা যাচ্ছে, আর ছয় মাসের জন্য সেদেশে রয়েছে বিদেশী মুদ্রা ভান্ডারের সম্ভার। এদিকে, আর্থিক পরিস্থিতি সঠিকভাবে সামাল না দিতে পারার অভিযোগে সেদেশের সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের গভর্নর মহাপ্রসাদ অধিকারীকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। উল্লেখ্য, নেপালের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির শাসনকালে গভর্নর মহাপ্রসাদ অধিকারী পদে আসীন হন। পরে শের বাহাদূর দেউবার আমলে আর্থিক সংকটের জেরে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এদিকে, নেপালের অবস্থা শ্রীলঙ্কার মতো হবে না বলে আশ্বস্ত করেছেন নেপালের অর্থমন্ত্রী জনার্দন শর্মা। যদিও তিনি স্বীকার করেছেন যে, স্বীকার করেছেন যে পেট্রোলিয়াম পণ্য, যানবাহন এবং বিলাসবহুল পণ্যের উচ্চ আমদানির কারণে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চাপের মধ্যে রয়েছে। এনআরবির ডেপুটি মুখপাত্র নারায়ণ প্রসাদ পোখারেল বলেন, সোনা বা গাড়ির মতো জিনিস আমদানী বন্ধ করতে বলা হয়নি, বরং তা আমদানী করতে অনুৎসাহিত করা হচ্ছে বর্তমান পরিস্থিতিতে। এদিকে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কে ২০২১ আর্থিক বছরে নেপাল সরকারের ঋণ ৪১.৪ শতাংশ বেড়ে যায় জিডিপির নিরিখে। যা ২০১৬, ২০১৯ সালে গড়ে ২৫.১ শতাংশ ছিল। ফলে জল্পনার পারদ আপাতত উর্ধ্বমুখী।