'বদল' এসেছে। তবে সেই 'বদলে'র সুবিধার বিষয়ে জনসাধারণকে বোঝাতে পারছে না কেন্দ্র। এ জিনিস আগেও দেখেছে দেশ। কৃষি আইন পাশের সময়ও আন্দোলনকারীদের চাপের মুখে পড়তে হয়েছিল কেন্দ্রকে। আন্দোলনকারীদের নিজেদের নীতি বোঝাতে পারেনি কেন্দ্র। আর এবার সেনায় ভর্তির জন্য 'অগ্নিপথ' প্রকল্প নিয়ে উত্তাল দেশ। যুব সমাজের জন্য এই প্রকল্প চালুর ঘোষণার পর থেকেই এই নিয়ে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। বহু জায়গায় আন্দোলকারীরা তাণ্ডব করেছেন। ট্রেনের পর ট্রেনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই আবহে বিজেপি এবং আরএসএস-এর বহু কর্তার বক্তব্য, এই প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধা পড়ুয়াদের সামনে তুলে ধরতে হবে কেন্দ্রকে।
বিজেপি দল হিসেবে সরকারের অগ্নিপথ প্রকল্পকে সমর্থন করছে স্বভাবতই। এই প্রকল্পকে সমর্থন জানাচ্ছে সেনাও। এই আবহে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরএসএস নেতা হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেন, 'আন্দোলনের মুখে পড়ে কিছুটা হতভম্ব সরকার। এর আগে সিএএ, কৃষি আইন নিয়েও এই একই ঘটনা ঘটেছিল।' এদিকে ‘অগ্নিপথ' প্রকল্প নিয়ে ক্রমশ খারাপ হচ্ছে দেশের পরিস্থিতি। সেই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরাসরি কোনও বার্তা না দিলেও ঘুরিয়ে বিক্ষোভকারীদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করলেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং। যদিও আরএসএস-এর অপর এক নেতার বক্তব্য, 'যখন প্রতিবাদ শুরু হয় এবং স্কিমের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সন্দেহের বীজ বপন করা হয় তখন লোকেদের বোঝানো কঠিন হয়ে যায়।' এই আবহে সরকারকে আরও বেশি করে মানুষের সঙ্গে যোগ স্থাপন করার কথা বলেন সেই আরএসএস নেতা।
এদিকে উত্তরপ্রদেশের এক বিজেপি নেতা হিন্দুস্তান টাইমকে বলেন, 'গত দুই বছর ধরে এই মহামারি কর্মসংস্থান এবং জীবিকাকে প্রভাবিত করেছে। বিশ্বব্যাপী অর্থনীতি খারাপ অবস্থায় রয়েছে এবং ভারত এই সমস্যাগুলি থেকে নিরাপদ ছিল না। এমন এক সময়ে একটা ধারণা তৈরি হচ্ছে যে সরকার চাকরি তৈরি করতে পারেনি, এমন সময়ে টাইমবাউন্ড সার্ভিসের ঘোষণা তরুণদের বিচলিত করেছে। সরকার এই প্রকল্পের সূক্ষ্ম বিশদ জানাতে সক্ষম হয়নি বা এটি কীভাবে বেকারত্ব বাড়াবে না।' দিল্লির এক বিজেপি নেতা এই বিষয়ে হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেন, 'বেকারত্বের সংখ্যা কমেছে কিন্তু তা এখনও সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। প্রধানমন্ত্রী আত্মনির্ভরতা এবং উদ্যোগ সম্পর্কে কথা বললেও মানুষ এখনও সরকারের থেকেই চাকরির প্রস্তাব আশা করে।'
উল্লেখ্য, চলতি সপ্তাহে ‘অগ্নিপথ’ মডেলের ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। সেই মডেলের আওতায় চার বছরের জন্য দেশের তিন সামরিক বাহিনীতে যুবক-যুবতীদের নিয়োগ করা হবে। চার বছরের চাকরির শেষে ৭৫ শতাংশ ‘অগ্নিবীর’-দের অব্যাহতি দেওয়া হবে। সেইসময় তাঁরা মোটা অঙ্কের প্যাকেজ পাবেন। সেইসঙ্গে কেন্দ্র জানিয়েছে, বিভিন্ন সরকারি চাকরিতে ‘অগ্নিবীর’-দের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
যদিও সামরিক বাহিনীতে চাকরির জন্য যাঁরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তাঁদের দাবি, ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্পের ফলে তাঁদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তা নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবারের পর শুক্রবারও বিহার, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানার মতো রাজ্যে আগুন জ্বলেছে। এই আবহে বিজেপি ও আরএসএস মনে করছে সরকারকে এই বিষয়ে আরও বেশি করে আলোচনা করতে হবে পড়ুয়াদের সঙ্গেই।