গণ-অভ্যুত্থানের আবহে সম্প্রতি বাংলাদেশে যত মৃত্যুর ঘটনার ঘটেছে, তার প্রত্যেকটির যথাযথ তদন্ত হওয়া দরকার। এমনটাই মনে করছে রাষ্ট্রসংঘ।
এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার হাই কমিশনার ভল্কার তুর্ক। তিনি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পালাবদলের প্রেক্ষাপটে ঘটে যাওয়া প্রত্যেকটি মৃত্যুরই যাতে তদন্ত করা হয়, সেই বার্তা দিয়েছেন। জানিয়েছেন, রাষ্ট্র সংঘের তরফেও এই সমস্ত ঘটনা ও অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
একইসঙ্গে ভল্কার জানিয়েছেন, বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিকের সমাবেশের অধিকার, মত প্রকাশের অধিকার এবং যেকোনও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়ার অধিকার এবং স্বাধীনতা রক্ষা করতে হবে।
উল্লেখ্য, দু'দিনের সফরে মঙ্গলবার বাংলাদেশ পৌঁছন ভল্কার তুর্ক। বুধবার ছিল তাঁর সেই সফরের শেষ দিন। এদিনই রাজধানী ঢাকায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তুর্ক।
সেই সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, 'যখনই কোনও হত্যার ঘটনা ঘটে, তখনই তার যথাযথ তদন্ত হওয়া দরকার। অপরাধী কে, সেটা এক্ষেত্রে বড় কথা নয়। ঘটনা ঘটলে তার তদন্ত করতেই হবে। আমরা কখনই অবাধে হত্যালীলা চলতে দিতে পারি না। আমরা সেই দায় ঝেড়ে ফেলতে পারি না।'
বুধবারের এই সাংবাদিক বৈঠকের আগেই বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস এবং বিদেশ মন্ত্রকের উপদেষ্টা মহম্মদ তৌহিদ হুসেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ভল্কার তুর্ক।
বুধবারের বৈঠকে মহম্মদ ইউনুসকে তুর্ক জানান, রাষ্ট্রসংঘের যে ফ্য়াক্ট ফাইন্ডিং মিশন রয়েছে, তার অধীনেই গত জুলাই-অগস্টে বাংলাদেশে ঘটা সমস্ত মৃত্যুর তদন্ত করা হচ্ছে।
ইউনুসের কাছে তুর্ক আশা প্রকাশ করেছেন, খুব সম্ভবত আগামী ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের তদন্ত রিপোর্ট রাষ্ট্রসংঘ কর্তৃপক্ষের কাছে জমা করা হতে পারে।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক গণ-অভ্যুত্থানের প্রসঙ্গে টেনে তুর্ক বলে, যখনই কোনও বদল বা পরিবর্তন ঘটে, তার জন্য অনেক মূল্য চোকাতে হয়। বিশেষ করে যাঁরা দুর্বল, এক্ষেত্রে তাঁরাই সবথেকে বেশি আক্রান্ত হন।
এরই সঙ্গে তুর্ক বলেন, 'যেভাবে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য ছাত্রসমাজ ও অন্যরা প্রচেষ্টা করছেন, আমি তাকে সাধুবাদ জানাচ্ছি।'
এই প্রসঙ্গেই তুর্ক জানান, 'গত ৫ অগস্ট থেকে ১৫ অগস্টের মধ্যে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর যে সমস্ত আক্রমণের অভিযোগ উঠেছে, আমাদের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন তারও তদন্ত করছে।'
এই ধরনের হামলার ঘটনায় প্রশাসনের ভূমিকা যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন তুর্ক। তিনি বলেন, যখনই এমন কোনও হামলা বা আক্রমণের খবর পাওয়া যাবে, প্রশাসনকে দ্রুত পদক্ষেপ করতে হবে। নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নিতে হবে।
একমাত্র তাহলেই সংখ্য়ালঘুরা প্রশাসনের উপর ভরসা করবেন। তাঁদের মনে সরকার ও প্রশাসনের প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা তৈরি হবে।
এরই সঙ্গে, সামাজিক সাম্য এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিতে পারস্পরিক বিশ্বাসের বাতাবরণ ফিরিয়ে আনার পক্ষে সওয়াল করেছেন তুর্ক। গত কয়েক বছরে যে নাগরিক স্থানগুলি নষ্ট হয়ে গিয়েছে, সেগুলিকেও পুনরুদ্ধার করার বার্তা দিয়েছেন তিনি।