কাউকে যদি ভয় দেখিয়ে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার জন্য সম্মতি প্রদান করতে বাধ্য করা হয়, তাহলে তা কখনই সম্মতি হিসাবে গণ্য করা হতে পারে না। এই যুক্তিতেই বিয়ের ভুয়ো প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস সংক্রান্ত একটি মামলায় এক অভিযুক্তের মুক্তির আর্জি খারিজ করে দিল এলাহাবাদ হাইকোর্ট।
কী ঘটেছিল?
সংশ্লিষ্ট মামলাটি রুজু করা হয় বিচারপতি অনীশ কুমার গুপ্তার এজলাসে। মামলাকারী রাঘব কুমার তাঁর বিরুদ্ধে চলা অন্য একটি ফৌজদারি মামলা বাতিল করার আবেদন জানিয়ে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন।
ওই ফৌজদারি মামলাটি বিয়ের ভুয়ো প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস সংক্রান্ত। যা আগ্রা জেলা ও দায়রা আদালতের বিচারাধীন রয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আগ্রার একটি থানায় ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করা হয়। সেই মামলার এফআইআরে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত যুবক প্রথমে এক তরুণীকে অচেতন করে তাঁর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক তৈরি করেন।
সেই ঘটনার পর তরুণীকে বিয়ের ভুয়ো প্রতিশ্রুতু দিয়ে আরও একাধিকবার তাঁর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেন ওই যুবক। তাঁর আইনজীবীর দাবি, তাঁর মক্কেল এবং ওই তরুণী দীর্ঘদিন পরস্পরকে চিনতেন। পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতেই তাঁদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক তৈরি হয়।
সরকারি আইনজীবী এই দাবির বিরোধিতা করে বলেন, অভিযুক্ত যুবক প্রথম থেকেই ওই তরুণীর সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। এমনকী, তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতেও তিনি প্রতারণার আশ্রয় নেন এবং তরুণীর সঙ্গে জোরজবরদস্তি করেন।
আদালতের পর্যবেক্ষণ
এই বিষয়ে দুই পক্ষের বক্তব্য শোনার পর আদালত সমস্ত তথ্য প্রমাণ খতিয়ে দেখে। গত ১০ সেপ্টেম্বর আদালত তার পর্যবেক্ষণ ও সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে।
সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের বক্তব্য হল, অভিযুক্ত যুবক এবং উচ্চ আদালতে রুজু হওয়া মামলার আবেদনকারী যেহেতু ওই তরুণীর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য প্রথমেই মিথ্যা ও প্রতারণা আশ্রয় নেন এবং তরুণীকে ভয় দেখান, তাই এক্ষেত্রে তাঁদের মধ্যে যে শারীরিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছে, তা অপরাধ। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬ নম্বর ধারা অনুসারে এই ঘটনা ধর্ষণ বলেই উল্লেখ করেন বিচারপতি।
বিচারপতি আরও বলেন, এরপর ওই যুবক তরুণীকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেন এবং তাঁর সঙ্গে পুনরায় একাধিকবার যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার সম্মতি আদায় করে নেন।
এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, প্রথমবার ওই তরুণীর সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছিল এবং তাঁর সঙ্গে বলপ্রয়োগ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে যা কিছু হয়েছে, তা সেই প্রথম ঘটনারই ফলশ্রুতি।
তাই আদালতের মনে করছে না যে ওই যুবকের বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতে বিয়ের ভুয়ো প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস ও ধর্ষণের যে মামলা চলছে, তা খারিজ করার কোনও যুক্তি রয়েছে।