হিন্দু বিবাহ কোনও চুক্তি নয় যে চাইলেই তা বাতিল করে দেওয়া হবে। এই বিবাহ বন্ধনকে পবিত্র হিসাবে গণ্য করা হয়। তাই, কেবলমাত্র সীমিত কিছু ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট দুই পক্ষের পেশ করা প্রমাণের ভিত্তিতে আইনত বিবাহ বিচ্ছেদ করা যেতে পারে। একটি মামলার প্রেক্ষিতে এমনটাই তার পর্যবেক্ষণে জানিয়েছে উত্তরপ্রদেশের এলাহাবাদ হাইকোর্ট।
সংবাদ সংস্থা পিটিআই সূত্রে খবর, বিচারপতি সৌমিত্র দয়াল সিং এবং বিচারপতি দোনাডি রমেশের ডিভিশন বেঞ্চে বিবাহ বিচ্ছেদ সংক্রান্ত একটি মামলা করেন এক মহিলা। সেই মামলার শুনানিতে বেঞ্চের তরফে বলা হয়, কেবলমাত্র দুই পক্ষের সম্মতির ভিত্তিতেই কোনও আদালত বিবাহ বিচ্ছেদের নির্দেশ দিতে পারে। অন্তিম রায়দান হওয়ার আগে পর্যন্তই যা কার্যকর থাকবে।
আদালতের আরও পর্যবেক্ষণ, চূড়ান্ত রায়দানের আগেই যদি এক পক্ষ সম্মতি প্রদানের অবস্থান থেকে সরে আসে, তাহলে আর প্রাথমিক সম্মতির ভিত্তিতে আদালত বিবাহ বিচ্ছেদের নির্দেশ দিতে পারে না।
উল্লেখ্য, এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট মহিলার অবস্থান নিয়েই জটিলতা তৈরি হয় এবং এই মহিলাই বুলন্দশহর অতিরিক্ত জেলা আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে মামলা করেন। এই মামলায় নিম্ন আদালত বিবাহ বিচ্ছেদের পক্ষে রায় দিয়েছিল। সেই রায় চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন মহিলা।
ঘটনা প্রসঙ্গে জানা গিয়েছে, ওই মহিলার বিয়ে হয় ২০০৬ সালে। কিন্তু, ২০০৭ সালে তিনি তাঁর স্বামীকে ছেড়ে চলে যান এবং আলাদা থাকতে শুরু করেন। যার জেরে, ২০০৮ সালে তাঁর স্বামী নিম্ন আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন জানিয়ে মামলা রুজু করেন। প্রাথমিকভাবে বিবাহ বিচ্ছেদে সায় দেন মহিলাও। জানান, তিনি আলাদাই থাকতে চান।
কিন্তু, পরবর্তী সময়ে মহিলা তাঁর অবস্থান বদল করেন এবং জানিয়ে দেন, তিনি বিবাহ বিচ্ছেদে রাজি নন। এরপর ওই দম্পতি আবারও একসঙ্গে থাকতে শুরু করেন। তাঁদের দুই সন্তানও হয়। কিন্তু, সংশ্লিষ্ট মামলায় দুই পক্ষের প্রাথমিক সম্মতি প্রদানের ভিত্তিতে নিম্ন আদালত বিবাহ বিচ্ছেদের রায় দেয়।
এরই প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতে পাল্টা মামলা করেন মহিলা। তার ভিত্তিতে এলাহাবাদ হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের রায় খারিজ করে দেয়। একইসঙ্গে স্পষ্ট করে, এক্ষেত্রে বিবাহ বিচ্ছেদের নির্দেশ উচ্চতম আদালতের চূড়ান্ত রায়দানের আগে পর্যন্তই শুধুমাত্র কার্যকর থাকবে।
উচ্চ আদালতের এই নির্দেশ ও পর্যবেক্ষণে সংশ্লিষ্ট দম্পতি ও তাদের পারিবারিক সমস্যা মিটল বলেই মনে করছে আইনজীবী মহল।