'মসজিদের মাথায় লাউডস্পিকার বাঁধার অনুমতি দেওয়া হোক। আদালত রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিক, যাতে তারা এই অনুমতি মঞ্জুর করে। কারণ, এটা অধিকার।' এমনই দাবি নিয়ে উত্তরপ্রদেশের এলাহাবাদ হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন মামলাকারী। কিন্তু, গত বুধবার সেই আবেদন সম্বলিত সংশ্লিষ্ট রিট পিটিশনটি খারিজ করে দেয় আদালত।
এক্ষেত্রে আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল, যেকোনও ধর্মীয় স্থান আদতে উপাসনা করার জায়গা, তা একটি প্রার্থনাস্থল। তাই সেখানে লাউডস্পিকার লাগানোর বা তা ব্যবহার করার কোনও প্রয়োজন নেই। এক্ষেত্রে লাউডস্পিকার লাগানোটা কখনই কারও অধিকার হিসাবে বিবেচিত হতে পারে না।
সংশ্লিষ্ট রিট পিটিশনটি করেছিলেন পিলভিটের বাসিন্দা মুখতিয়ার আহমেদ। সেই মামলা শুনানির জন্য ওঠে এলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি অশ্বিনী কুমার মিশ্রা এবং বিচারপতি দোনাদি রমেশের বেঞ্চে।
মামলাকারীর বক্তব্য শোনার পর বেঞ্চ তার পর্যবেক্ষণে জানায়, 'ধর্মীয় স্থল হল এমন এক স্থান, যেখানে ঈশ্বরের উদ্দেশে প্রার্থনা করা হয়। তাই এক্ষেত্রে লাউডস্পিকার ব্যবহার কখনও অধিকার হিসাবে গ্রাহ্য হতে পারে না। বিশেষ করে যখন সেই লাউডস্পিকারের তীব্র শব্দ থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা বিরক্ত হতে পারেন।'
অন্যদিকে, রাজ্যের আইনজীবী প্রথম থেকেই এই রিট পিটিশনের বিরোধিতা করে আসছিলেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, যিনি এই মামলা রুজু করেছেন, তাঁর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঘটনার কোনও সম্পর্ক নেই। এবং তিনি কোনও মসজিদের সঙ্গেও যুক্ত নন। কাজেই তাঁর এই বিষয়ে রিট পিটিশন দাখিল করা আদৌ কতটা আইনত যুক্তিযুক্ত, সেই প্রশ্ন তুলে সংশ্লিষ্ট রিট পিটিশন খারিজ করে দেওয়ার দাবি জানান রাজ্য সরকারের আইনজীবী।
রাজ্যের এই যুক্তি মেনে নিয়েছে সংশ্লিষ্ট বেঞ্চও। আদালতের বক্তব্য, একথা ঠিক যে এই ঘটনা বা বিষয়ের সঙ্গে মামলাকারীর কোনও সম্পর্ক নেই। তাই, তিনি এই ইস্যুতে রিট পিটিশন দাখিল করতে পারেন না। কারণ, সেই অধিকারই (লোকাস) তাঁর নেই।
এখানে এলাহাবাদ হাইকোর্ট যে 'লোকাস' শব্দটি ব্যবহার করেছে, তা আসলে একটি আইনি শব্দ। যার অর্থ হল, যেকোনও ব্য়ক্তি, গোষ্ঠী, সংস্থা বা সংগঠনের কোনও বিষয়ে আদালতে মামলা রুজু করার অধিকার। এক্ষেত্রে মামলাকারীর সেই অধিকার নেই বলেই আদালত তার পর্যবেক্ষণে জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, এর আগে মহারাষ্ট্রের বম্বে হাইকোর্টও প্রায় একই রায় দিয়েছিল। একটি মামলার প্রেক্ষিতে আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল, ধর্মীয় কোনও কর্মকাণ্ডে লাউডস্পিকার কখনই গুরুত্বপূর্ণ কোনও বিষয় হতে পারে না।
সেই মামলায় বিচারপতি এ এস গড়করি এবং বিচারপতি এস সি চন্দকের বেঞ কঠোরভাবে শব্দ দূষণের মোকাবিলা করার পক্ষে রায় দিয়েছিল।