করোনা মহামারীর মধ্যেই ব্ল্য়াক ফাঙ্গাসকে ঘিরে নয়া উদ্বেগ দেশজুড়ে। করোনা অতিমারির নানা দিক নিয়ে হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিনিধি সুনেত্রা চৌধুরীর নানা প্রশ্নের জবাব দিলেন ইউনিভার্সিটি অফ মেরিল্যান্ডের সংক্রামক রোগ বিভাগের প্রধান ডঃ ফাহিম ইউনুস।
HT: মিউকরমাইসোসিস অথবা ব্ল্যাক ফাঙ্গাসকে নিয়ে উদ্বিগ্ন ভারতের চিকিৎসকরা। আচমকা কেন বেড়ে গেল এই ফাঙ্গাসকে আক্রান্তের ঘটনা?
Dr.Faheem: তিনটে ফ্যাক্টর কাজ করছে এই রোগ বৃদ্ধির পেছনে। পরিবেশে, মাটিতে এটি আগে থেকেই ছিল। কিন্তু ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে এটি বেড়ে যাচ্ছে। হাই ডোজের স্টেরয়েড প্রয়োগ করলে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে, ক্যানসার. ডায়ালিসিসের ঘটনা থাকলে ও কোন পরিবেশে রোগী রয়েছেন তার উপর নির্ভর করছে। তবে নিরাময়ের ক্ষেত্রে ওষুধের যথাযথ ব্যবহার হওয়াটা জরুরী।
HT: আপনি কি মনে করছেন মানুষ নিজেই নিজের চিকিৎসা করছেন?
Dr. Faheem: দেখুন কোন ধরণের চিকিৎসা দরকার সেটা চিকিৎসকরাই নির্ধারন করতে পারবেন। ধরা যাক আপনি বাড়িতে রয়েছেন, অক্সিজেনের প্রয়োজন নেই, তখন স্টেরয়েড নিলে আপনারই ক্ষতি হবে।
HT: তবে এখন কী করা দরকার?
Dr Faheem: প্রথমেই বলে রাখা ভালো এটি কোভিডের মতো সংক্রামক নয়। প্রথমেই আতঙ্ক থেকে বেরিয়ে আসুন। স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে হবে। মাটিতে এই ধরণের ফাঙ্গাস থাকে। সেকারণে মানুষের মধ্যে সচেতনতা প্রয়োজন। দ্রুত রোগকে ধরতে হবে। মুখে, মাথায় ও ঘাড়ে এর সংক্রমণ বেশি ছড়ায়। সেকারণে দ্রুত রোগ ধরে চিকিৎসা করতে হবে।
করোনার নানা দিক নিয়েও জবাব দিয়েছেন তিনি। কী বলছেন চিকিৎসক?
HT: আচ্ছা যদি কেউ আক্রান্ত হন তবে কি তিনি ভ্যাকসিন নেবেন? সরকার তো বলছে তিন মাস অপেক্ষা করার জন্য়। কিন্তু ভ্যাকসিন কম থাকার জন্য এসব বলা হচ্ছে না তো? সাধারণ মানুষ কী করবেন?
Dr. Faheem: দেখুন আপনি যদি কাউকে বিশ্বাস না করেন তবে তাঁর কথা শুনবেন না। তবে চিকিৎসককে যদি বিশ্বাস করেন তবে তাঁর কাছে সারেন্ডার করুন। না হলে উদ্বেগ আরও বাড়বে। সবটাই যে অন্ধকার এমনটা নয়। এটা ঠিক, কোভিড থেকে পুরোপুরি সেরে ওঠার পরেই আপনি ভ্যাকসিন নিন। প্রচুর তথ্য আছে যেখানে বলা হচ্ছে তিন মাস থেকে ১২ মাস পর্যন্ত আপনার আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম।
HT: কিন্তু টিকার অভাব আছে বলে তো ওরা বলছেনও না?
Dr Faheem: সেকারণেই আমরা চিকিৎসক আর তাঁরা রাজনীতিবিদ। তবুও বলছি আক্রান্ত হওয়ার পরেও টিকা না নিয়ে তিনমাস আপনার ঝুঁকি কম।
HT: দেখুন টিকা নিয়েও নানা ধরণের কথা উঠছে। সেসব নিয়ে কী বলবেন?
Dr Faheem: দেখুন একক কোনও উদাহরণকে না শুনে সার্বিকভাবে কী বলা হচ্ছে সেটাই দেখুন।
HT: আচ্ছা প্রথম ডোজ নেওয়ার পরই যদি কেউ কোভিডে আক্রান্ত হন তখন দ্বিতীয় ডোজ তিনি কবে নেবেন?
Dr. Faheem: আমেরিকাতে এরকম প্রচুর নজির রয়েছে। এটা জানা দরকার, প্রথম ডোজ নেওয়ার পরে যদি সংক্রামিত হন তবে দ্বিতীয় ডোজ তিনমাসের মধ্যে নিতে পারেন। তবে বিজ্ঞানের নানা মতামত দ্রুত বদলাচ্ছে এটা বলতেই পারি।
HT: আচ্ছা ভারতের চিকিৎসকরা তো টিকা নিয়েছিলেন, তারপরেও কেন তাঁদের কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে?
Dr. Faheem: দেখুন ৪০ মিলিয়ন মানুষ টিকা নেওয়ার পরে ৪০০ জনের যদি মৃত্যু হয় পরবর্তীতে, তবে শতাংশের হিসাবে ০.০০১। এটা মনে রাখা দরকার।
HT: তার মানে টিকা নেওয়ার পরেও যাদের মৃত্যু হচ্ছে সেটা তবে ব্যতিক্রমী ঘটনা?
Dr. Faheem: একদম। মৃত্যু হারটা দেখতে হবে। টিকা না নিলে দ্বিতীয় অপসন কোনটা?
HT: আচ্ছা ভারতের মানুষ যাতে ভালো থাকেন সেব্যাপারে কিছু বলবেন?
Dr Faheem: সিটবেল্ট পরার পরেও তো মানুষের মৃত্যু হয়। তার মানে সিটবেল্ট পরব না এটা নয়।
HT: আচ্ছা কোভিডের পরের ঢেউতে কি বাচ্চারা আরও সংক্রামিত হবে?
Dr Faheem: এনিয়ে আমি কোনও বিবৃতি দিতে চাই না যেখানে ভারত একটি কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এটার যথার্থতা নিয়ে কোনও বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য নেই। তাছাড়া বাচ্চা বলতে ১৮ বছরের নীচে নাকি ১০ বছরের নীচে বোঝাচ্ছে? কমবয়সীদের মধ্যে প্রভাব পড়তে পারে এটা বলতে পারি।
HT: আরও এই ধরণের ঢেউ কি আসবেই?
Dr Faheem:এটা খুব শক্ত প্রশ্ন। তবে বলতে পারি যদি টায়ার পাংচার হয়ে যায় আর হাওয়া ভরে কিছুটা যেতে পারবেন। কিন্তু পুরোপুরি না মেরামত না করা পর্যন্ত সমস্যা মিটবে না। সেরকমই লকডাউন মানে কিছুটা যেতে পারবেন কিন্তু পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক করার জন্য ভ্যাকসিন প্রয়োজন।