মহাকুম্ভ মেলায় যোগ দিতে দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকে উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে এসে জমায়েত করেছেন সাধু-সন্তরা। তেমনই একজন হলেন বাবা মোক্ষপুরী। বাকি সাধুদের ভিড়ে বিশেষভাবে নজর কাড়ছেন তিনি। তার প্রধান কারণ তাঁর চেহারা। দাড়ি, গোঁফের জঙ্গলে মুখ ঢাকা পড়লেও, ভালোই বোঝা যাচ্ছে, তিনি আসলে ভিনদেশি।
কথা বলে জানা গেল, বাবা মোক্ষপুরীর আসল নাম মাইকেল। এক সময় ছিলেন মার্কিন সেনাবাহিনীর সদস্য! তাঁর দাবি, তিনি তাঁর জীবন সনাতন ধর্মের উদ্দেশে উৎসর্গ করেছেন। বর্তমানে যুক্ত রয়েছেন জুনা আখারার সঙ্গে। হিন্দু ধর্মের প্রচারই এখন তাঁর জীবনের মূল লক্ষ্য।
মার্কিন সেনা থেকে হিন্দু সাধু? এটা কীভাবে সম্ভব হল?
এর জবাবে বাবা মোক্ষপুরী জানালেন, 'একটা সময় ছিল, যখন আমিও আর পাঁচজনের মতো অতি সাধারণ ছিলাম। আমি পরিবারের সঙ্গে, আমার স্ত্রীর সঙ্গে সময় কাটাতে ভালোবাসতাম। বেড়াতে ভালোবাসতাম। আমি সেনাবাহিনীতেও যোগ দিয়েছিলাম।...'
'কিন্তু, তারপর একদিন আমি অনুভব করলাম, জীবনে কোনও কিছুই চিরস্থায়ী নয়। আর তখন থেকেই শুরু হল আমার মুক্তিলাভের পথ অনুসন্ধানের প্রয়াস।'
মাইকেলের জন্মও হয়েছিল আমেরিকায়। ২০০০ সালে প্রথমবার ভারতে আসেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী এবং তাঁদের ছেলেও।
মাইকেল থেকে বাবা মোক্ষপুরী হয়ে যাওয়া সাধু বলেন, 'সেই ভারতে আসাটা আমার জীবনের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল। সেই সময়েই আমি প্রথম যোগাভ্যাস ও ধ্যান সম্পর্কে অবগত হই। প্রথমবার জানতে পারি সনাতন ধর্মের কথা। ভারতীয় সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য আমাকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করে। আর এভাবেই আমার জীবনের আধ্যাত্মিক যাত্রা শুরু হয়। এখন আমার মনে হয়, আসলে ওটাই ছিল আমার প্রতি ঈশ্বরের ডাক।'
ছেলের মৃত্যুটাই সবকিছু বদলে দিয়েছিল:
মাইকেল থেকে বাবা মোক্ষপুরী হয়ে ওঠার এই সফরে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছিল। যা অত্যন্ত বেদনার। সেই ঘটনা হল - তৎকালীন মাইকেলের একমাত্র সন্তান, তাঁদের ছেলের অকালমৃত্যু।
তিনি বলেন, 'ওই মর্মান্তিক ঘটনাটাই আমাকে শিখিয়ে দিয়েছিল, জীবনে কোনও কিছুই চিরস্থায়ী নয়। সেই সময়ে আমি যোগাভ্যাস এবং ধ্যান করা শুরু করি। তাতে কঠিন সময়টা পার করতে কিছুটা সুবিধা হয়।'
বর্তমানে পৃথিবীর নানা দেশে ঘুরে সনাতন ধর্ম ও ভারতীয় সংস্কৃতির প্রচার করে বেড়ান বাবা মোক্ষপুরী। ২০১৬ সাল থেকে কুম্ভ মেলায় যোগদান করা শুরু করেন তিনি। তাঁর মতে, এমন বিরাট আয়োজন শুধু ভারতেই সম্ভব। আগামী দিনে নিউ মেক্সিকোয় একটি আশ্রম খোলার পরিকল্পনা রয়েছে বাবা মোক্ষপুরীর।