প্রজাতন্ত্র দিবসে বিশ্বের সামনে ভারতের ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত করে একদল কৃষক লাল কেল্লায় ঢুকে পড়ে। তারা শিখদের ধর্মীয় পতাকা নিশান সাহিব সেখানে উত্তোলন করে। দিল্লিতে ট্র্যাক্টর মিছিলে অশান্তির জেরে মৃত্যু হয়েছে এক চাষীর। আহত হয়েছেন ৮৩ পুলিশ। লালকেল্লা ঘটনায় যার ওপর অভিযোগের তীর উঠেছে, সেই অভিনেতা তথা সমাজকর্মী দীপ সিধু যদিও নিজেদের কাজের মধ্যে দোষ দেখছেন না। তার মতে লাল কেল্লায় নিশান সাহিব উত্তোলন নেহাতই প্রতীকী প্রতিবাদ ছিল।
মঙ্গলবার বিকেলে ফেসবুকে একটি ভিডিওতে আত্মপক্ষ সমর্থন করে সিধু বলেন যে এটি পূর্বপরিকল্পিত ছিল না। তিনি বলেন যে চাষীরা যা করেছে সেটাকে কোনো সাম্প্রদায়িক রং দেওয়া উচিত নয়। এটি চরমপন্থীদের কাজ এমন ভাবেও দেখা উচিত নয়। তিনি বলেন প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে নিশান সাহিব ও কৃষকদের পতাকা সেখানে উত্তোলন করা হয়। তারা কৃষকদের একতার স্লোগান দেন বলেন দীপ।
প্রসঙ্গত, শিখদের অতি পবিত্র এই পতাকা সমস্ত গুরুদ্বারে দেখতে পাওয়া যায়। এই পতাকা দেশের বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের বার্তা দেয় বলে দাবি করেন দীপ সিধু। জাতীয় পতাকা যে সরানো হয়নি ও দেশের অখণ্ডতা ও ঐক্য নিয়ে যে কারো মনে কোনও সন্দেহ নেই, সেই দাবিও করেন চাপের মুখে থাকা কৃষক আন্দোলনকারী।
তবে চাষীদের এই কাজ নিয়ে সমালোচনা করেছেন দলমত নির্বিশেষে নেতারা। শশী থারুর থেকে বিজেপির নেতারা, সবাই কৃষকদের তুলোধোনা করেন লাল কেল্লায় প্রবেস করার জন্য। তবে দীপ সিধু বলেন যে মানুষের দাবি শোনা হয়নি, তাই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে কৃষকদের মধ্যে। প্রসঙ্গত গত লোকসভা ভোটের সময় সানি দিওলের হয়ে কাজ করেছিলেন দীপ সিধু। তবে পরে এই কৃষি আন্দোলনের সময় রাজনৈতিক ভাবে দুজনে দূরে সরে যান। যোগেন্দ্র যাদব বলেন যে দীপ সিধুকে তারা আগে থেকেই এই আন্দোলন থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন। তাঁর কার্যকলাপ দেখেই এই সিদ্ধান্ত বলে জানান যোগেন্দ্র। সংযুক্ত কিষান মোর্চাও বলেছে যে যারা হিংসায় লিপ্ত হয়েছিল তাদের সঙ্গে কোনও যোগ নেই কৃষকদের। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের ভিতর সমাজবিরোধীরা প্রবেশ করে গিয়েছে বলে কৃষক সংগঠনদের দাবি।
তবে দীপ সিধু কিন্তু সেটা মানছেন না। তাঁর মতে একজনের পক্ষে এতটা সংগঠিত করা সম্ভব নয়। গত কিছু মাস ধরে যা চলছে, তারই বহিঃপ্রকাশ এটা বলে তাঁর দাবি। তবে বিক্ষোভকারীরা হিংসা করার জন্য দিল্লিতে যায়নি বলে তিনি জানান। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ চলছিল বলে তিনি জানান।
বাস্তব যদিও বেশ কিছুটা অন্য। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান ও ভিডিও ফুটেজ থেকে দেখা গিয়েছে যে ট্র্যাক্টর দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ব্যারিয়ার ভেঙে চাষীরা বিভিন্ন জায়গা দিয়ে দিল্লিতে প্রবেশ করে। হাতে লাঠি-সোঁটা নিয়ে পুলিশকে ক্রমশ দিশেহারা করে লাল কেল্লাতে চড়াও হয় একদল বিক্ষোভকারীরা। রীতিমত সেখানে হুলুস্থুল কাণ্ড করার পর লাল কেল্লা ছাড়ে তারা। আহত হয় ৮৩ পুলিশ। যারা আইন নিজেদের হাতে নিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে যথাযোগ্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।