মকর সংক্রান্তিতে প্রয়াগরাজের মহাকুম্ভ মেলায় 'অমৃত স্নান' শুরু হয়ে গেল। উত্তরপ্রদেশ সরকারের নির্ধারিত সূচি মেনে মঙ্গলবার ভোরে ত্রিবেণী সংগমে প্রথম 'অমৃত স্নান' সারেন শ্রী পঞ্চায়েতি আখাজডা মহানির্বাণী এবং শ্রী শম্ভু পঞ্চায়েতি অটল আখাড়ার সাধু-সন্ন্যাসীরা। একেবারে শেষে 'অমৃত স্নান' সারার কথা আছে শ্রী পঞ্চায়েতি নির্মল আখাড়ার। দুপুর ৩ টে ৪০ মিনিট থেকে বিকেল ৪ টে ২০ মিনিট পর্যন্ত তাদের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। উত্তরপ্রদেশ সরকারের অনুমান, এবার মকর সংক্রান্তিতে রেকর্ড সংখ্যক পুণ্যার্থী 'অমৃত স্নান' সারবেন। আর গঙ্গাসাগর মেলাতেও নয়া রেকর্ড হবে বলে আশাবাদী পশ্চিমবঙ্গ সরকার। মকর সংক্রান্তির মাহেন্দ্রক্ষণের আগেই সোমবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ৫৫ লাখ পুণ্যার্থী গঙ্গাসাগরে পুণ্যস্নান সেরে ফেলেছেন। যে সংখ্যাটা আজ আরও বাড়বে বলে অনুমান করা হয়েছে।
মহাকুম্ভ মেলায় খুব শান্তি লাগছে, বলছেন বেলজিয়ামের তরুণী
আর পুণ্যস্নানের জন্য মহাকুম্ভ মেলা এবং গঙ্গাসাগর মেলায় ভিড় উপচে পড়েছে। বিভিন্নপ্রান্তের মানুষ এসেছেন। মহাকুম্ভ মেলায় রাশিয়া, বেলজিয়াম, আমেরিকা, জার্মানির মতো দেশ থেকেও পুণ্যার্থীরা এসেছেন। 'ওম জয় জগদীশ' এবং 'মহিষাসুর মর্দিনী' গাইতে দেখা যায় একদল বিদেশি পুণ্যার্থীকে। তারইমধ্যে বেলজিয়াম থেকে আসা এক মহিলা পুণ্যার্থী বলেন, 'এখানে এসে খুব শান্তি লাগছে।' জার্মানি থেকে আগত থমাস নামে এক ব্যক্তি আবার বলেন, 'আমি আধ্যাত্মিক শক্তি অনুভব করতে চাই।'
'সনাতন ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে এসেছি', বললেন রাশিয়ান তরুণী
আবার প্রিয়মাদাসী নামে এক তরুণী বলেছেন, 'আমি বৃন্দাবনে থাকি। কিন্তু আমি আদতে রাশিয়ার মেয়ে। আমাদের গুরুর কথায় সনাতন ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে আমরা এখানে এসেছি। আমরা মানুষের সঙ্গে এই অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চাই। আমরা ভগবত গীতা কিনেছি। আমরা মানুষকে তাঁদের আসল জীবন এবং ধর্মের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। কীভাবে এই বিশ্বে মানুষ আনন্দে থাকতে পারবেন, সেটা জানাতে চাই।'
স্টিভ জোবসের স্ত্রীও পুণ্যস্নান সারবেন
অন্যদিকে স্টিভ জোবসের স্ত্রী লরেন পাওয়েলেরও আজ পুণ্যস্নান করার কথা আছে। বিষয়টি নিয়ে স্বামী কৈলাশনন্দ গিরি বলেছেন, 'উনি স্নান করতে চান। উনি আমার শিবিরে আছেন। হাতে অ্য়ালার্জি হয়ে গিয়েছে। উনি কখনও এত ভিড়ের মধ্যে আসেননি। খুব সরল উনি। একা গিয়ে স্নান সারবেন। সেই ব্যবস্থা করে দেব।' সেইসঙ্গে তিনি বলেছেন, 'আমাদের পরম্পরার সঙ্গে দুনিয়ার সেইসব মানুষও যুক্ত হতে চান, যাঁরা কখনও এই ঐতিহ্যের সাক্ষীও থাকেননি।'
আরও পড়ুন: Steve Jobs' Wife: পরনে গোলাপি কুর্তি, মাথায় সাদা ওড়না, কাশীর মন্দিরে পুজো দিলেন স্টিভ জোবসের স্ত্রী
সেই একই কথা বলেছেন আনন্দ আখাড়ার কুমার স্বামাজি মহারাজ। তিনি বলেন, '(মহাকুম্ভের) থেকে বড় কিছু হয় না। যাঁরা এখানে আসতে পারেন, তাঁরা অত্যন্ত ভাগ্যবান। যেখানেই আমরা দেখি না কেন, সেখানে লোকজন নিজেদের মধ্যে সংঘাতে জড়িয়ে আছেন। এখানে শান্তি আছে।' সেইসঙ্গে তিনি বলেন, 'আমরা শাস্ত্র এবং সাধুরা সবসময় বিশ্বে শান্তি বজায় রাখার পক্ষে সওয়াল করে এসেছেন। এই দিনটা চাক্ষুষ করার সুযোগ দেওয়ার জন্য ভগবান শিবকে ধন্যবাদ।'
আরও পড়ুন: Maha Kumbh 2025: মহাকুম্ভে ‘সাধু’দের সওয়ারি মার্সিডিজ থেকে রোলস রয়েস! চোখ ছানাবড়া বাকিদের
কলকাতায় বিহু ও পোঙ্গল উদযাপন
আর মহাকুম্ভ এবং গঙ্গাসাগরে পুণ্যস্নানের মধ্যে আজ ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে উৎসব আছে। অসমে আজ উদযাপিত হচ্ছে মাঘ বিহু। দক্ষিণ ভারতে পালন করা হচ্ছে পোঙ্গল। উৎসবে মেতে উঠেছেন কলকাতায় বসবাসকারী অসম এবং তামিলনাড়ুর মানুষরাও। কেউ-কেউ ২০ বছর ধরে শহরে আছেন। কেউ আবার কলকাতায় থাকছেন ৫০ বছর ধরে। আর সেখানেই নিজেদের উৎসব উদযাপন করছেন।