গত ১৪ অক্টোবর হায়দরাবাদের একটি মন্দিরে মূর্তি ভাঙার অভিযোগ ওঠে। পুলিশের দাবি, সেই ঘটনায় ৩০ বছরের যে যুবক জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে, সে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক! প্রশ্ন উঠছে, শিক্ষিত হয়েও কেন এমন ঘটনা ঘটাল ওই যুবক?
পুলিশ বলছে, সোশাল মিডিয়ায় নিয়মিত স্বঘোষিত ইসলামের প্রচারক জাকির নায়েক এবং তাঁরই মতো অন্য়ান্য ব্যক্তির ভাষণ শুনত ওই যুবক। তার জেরেই তার মধ্যে চরমপন্থী মনোভাব তৈরি হয়। পুলিশের আরও দাবি, এই প্রথম নয়। এর আগে মুম্বইয়েও একই কাণ্ড ঘটিয়েছিল সে।
অভিযোগ, সোমবার সকালে সেকেন্দ্রাবাদের মুথ্যালাম্মা মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রবেশ করে সলমন সলিম ঠাকুর ওরফে সলমন নামে ওই যুবক। তারপরই মন্দিরের প্রধান মূর্তিটির ক্ষতি করে সে।
এই ঘটনা জানাজানি হতেই স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। সেই প্রতিবাদে পরবর্তীতে বিভিন্ন হিন্দু সংগঠন ও বিজেপিও যোগ দেয়।
এখানেই শেষ নয়। এই ধরনের 'ইচ্ছাকৃত এবং অবমাননাকর' আচরণের জন্য ওই যুবককে এলাকারই কয়েকজন বাসিন্দা গণপিটুনি দেন। শেষমেশ পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে এবং হাসপাতালে ভর্তি করে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গণপিটুনির চোটে ওই যুবকের গুরুতর আঘাত লেগেছে। হাসপাতালে তার চিকিৎসা চললেও অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই ভারতীয় ন্যায় সংহিতার একাধিক ধারায় এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।
ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, সলমন আদতে মুম্বইয়ের বাসিন্দা। সোশাল মিডিয়ায় নিয়মিত জাকির নায়েকের ভিডিয়ো দেখত সে।
এই প্রসঙ্গে হায়দরাবাদ পুলিশ যে বিবৃতি প্রকাশ করেছে, সেই সম্পর্কে পুলিশেরই এক আধিকারিক বলেন, 'ওই যুবক সোশাল মিডিয়ায় অত্যন্ত সক্রিয়। আমরা ওর মোবাইল ফোন এবং সোশাল মিডিয়া অ্য়াক্টিভিটি খতিয়ে দেখে জানতে পেরেছি, সে নিয়মিত জাকির নায়েকের এবং তার মতোই অন্য আরও একাধিক ইসলামি প্রচারকের ভিডিয়ো দেখত।'
পুলিশের দাবি, সেই অর্থে ওই যুবক কোনও চরমপন্থী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত না হলেও, সোশাল মিডিয়ায় এইসব ভিডিয়ো দেখে সে নিজেই ক্রমশ ধর্মান্ধ ও গোঁড়া হয়ে ওঠে। একইসঙ্গে, অন্যান্য ধর্মাবলম্বীর প্রতি তার মনে হিংসা আর ঘৃণা লালিত হতে শুরু করে।
এর আগে মুম্বইয়েও হিন্দু, দেব, দেবীর মূর্তি নষ্ট করেছিল সে। তার জন্য মুম্বই পুলিশ তাকে গ্রেফতারও করেছিল। পরে সে ছাড়া পেয়ে যায়। চলতি মাসের প্রথম দিকে সলমন হায়দরাবাদ আসে। এখানে একমাসের একটি পার্সোনালিটি ডেভলপমেন্ট কর্মশালায় যোগ দেয় সে।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, একটি হোটেল চত্বরে বেআইনিভাবে জায়গা ভাড়া দেওয়া হয়েছিল। সেখানেই এই কর্মশালা চালানো হচ্ছিল। অথচ, তার জন্য কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি। যার জন্য এবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও আইনি পদক্ষেপ করা হবে।