মাত্র ২,৬০০ টাকায় একটা মূর্তি কিনেছিলেন এক মহিলা। নেহাত্ই ভাল লেগেছিল বলে। কিন্তু সেই মূর্তি যে কোটি টাকার (বা বলা ভালো 'অমূল্য') তা স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেননি। অজান্তেই প্রাচীন রোমান ভাস্কর্য কিনে ফেলেছিলেন ওই মার্কিন মুলুক নিবাসী।
প্রথম শতাব্দীর একটি প্রাচীন রোমান আবক্ষ মূর্তি। গত কয়েক দশক ধরে তা নিখোঁজ। অবশেষে পৃথিবীর অপর প্রান্তে মিলল তার খোঁজ। বর্তমানে এটি সান আন্তোনিও মিউজিয়াম অফ আর্টে রাখা হয়েছে।
২০১৮ সালের কথা। শিল্প সংগ্রাহক লরা ইয়াং টেক্সাসের অস্টিনে একটি গুডউইল স্টোরে টুকটাক কেনাকাটা করছিলেন। হঠাত্ই একটি টেবিলের নিচে, মেঝেতে একটি ভাস্কর্যে তাঁর চোখ আটকে যায়। দাম দেখেন মাত্র ৩৪.৯৯ ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ২,৭০০ টাকা। সেই সময়েই এই মূর্তিটি কিনে নেন তিনি। কেনার পর পরই মূর্তিটির একটি ছবি তুলেছিলেন লরা। ছবিতে মূর্তির গালে লাগানো প্রাইস ট্যাগ দেখা যাচ্ছে।
আবক্ষ মূর্তিটি কেনার পর, ইয়াং লক্ষ্য করেন, মূর্তিটি দেখতে বেশ পুরনো। তাই তাঁর কৌতূহল হয়। ঠিক করেন, এর ইতিহাস খুঁজে বের করবেন তিনি। যেমন ভাবা তেমন কাজ। পরবর্তী কয়েক বছর ধরে, টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্প ইতিহাসের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে খোঁজখবর শুরু করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন নিলাম হাউজের পরামর্শ নেন। তারপরেই কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরিয়ে আসে।
জর্গ ডেটারলিং নামে এক শিল্প বিশেষজ্ঞ জানান, আবক্ষ মূর্তিটির ঐতিহাসিক তাত্পর্য রয়েছে। এক জার্মান সংগ্রহশালার এক মূর্তির উপরের অংশ । এরপরেই তাঁরা জার্মান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
দেখা যায়, ভাস্কর্যটি খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীর শেষের দিকের। পম্পেই দ্য গ্রেটের এক পুত্রের মূর্তি। পম্পেই দ্য গ্রেট, জুলিয়াস সিজারের দ্বারা গৃহযুদ্ধে পরাজিত হয়েছিলেন। অন্যদিকে, আর্ট নিউজপেপারের রিপোর্টে দাবি, আবক্ষ মূর্তিটি রোমান সেনাপতি ড্রুসাস জার্মানিকাসের। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এটি মিত্রবাহিনীর বোমারুদের দ্বারা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
কিন্তু জার্মানি থেকে এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি চেন স্টোরে কীভাবে পৌঁছল?
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, যুদ্ধের সময়েই কোনও মার্কিন সেনা এই মূর্তিটি পান। তিনি সেটা নিয়ে নিজের দেশে ফিরে আসেন। তারপর হয় তো তাঁর পরিবারেই সেটি ছিল। পরে সেটা বিভিন্ন হাত ঘুরে শেষমেশ একটি চেন স্টোরে পৌঁছায়। বলাই বাহুল্য, কেউই এই মূর্তির আসল মূল্য বুঝতে পারেননি।
আপাতত ২০২৩ সালের ২১ মে পর্যন্ত মূর্তিটি স্যান অ্যান্টোনিও মিউজিয়াম অফ আর্টে রাখা থাকবে। পরে সেটি জার্মানিতে ফেরত পাঠানো হবে।