পূর্ব নির্ধারিত সূচি মেনে শুক্রবার (১৪ মার্চ, ২০২৫) বাংলাদেশের কক্সবাজারে অবস্থিত উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন রাষ্ট্রসংঘের প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস। আর তারপরই রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেন তিনি। যেখানে তাৎপর্যপূর্ণভাবে উঠে আসে আমেরিকা ও ইউরোপের প্রসঙ্গও। অন্যদিকে, বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, ইউনুস প্রশাসন দাবি করেছে, গুতেরেস কেয়ারটেকার সরকারের সংস্কার প্রক্রিয়াকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন।
এদিন বিকেলে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় শিবির পরিদর্শনের পর গুতেরেস জানান, সেখানে আবাসিক রোহিঙ্গারা মূলত দু'টি বিষয় নিয়ে নিজেদের দাবি জানিয়েছেন। প্রথমত- তাঁরা তাঁদের স্বদেশ - মায়ানমারে ফিরে যেতে চান।
গুতেরেস মনে করেন, রোহিঙ্গাদের এই দাবি ন্যায্য। বস্তুত, তাঁদেরকে তাঁদেরই মাতৃভূমি থেকে জোর করে উচ্ছেদ করে দেওয়া হয়েছে। এখন তাঁরা শুধু পালিয়ে বেড়াচ্ছেন এক দেশ থেকে এক দেশে। যেটা চরম অমানবিক। গুতেরেস মনে করেন, বিশ্ববাসী আস্ত একটি সম্প্রদায়কে (রোহিঙ্গা) ভুলে যাবে, এটা হতে দেওয়া যায় না। রাষ্ট্রসংঘের প্রধান মনে করেন, মায়ানমারে স্থিতাবস্থা ফেরা দরকার এবং এই বিষয়ে নিশ্চয় আন্তর্জাতিক মহল সচেষ্ট হবে।
রোহিঙ্গাদের দ্বিতীয় দাবিটি ছিল - তাঁরা গুতেরেসকে জানান, আশ্রয় শিবিরের পরিবেশ আরও ভালো ও উন্নত হওয়া দরকার। এটাও ন্যায্য দাবি বলেই গুতেরেস মনে করেন।
কারণ - মানবজাতির সকল সম্প্রদায়েরই ভালোভাবে বেঁচে থাকার পূর্ণ অধিকার রয়েছে। কিন্তু, রোহিঙ্গা শিবিরগুলি চলছে দানের টাকায়। গুতেরেস উল্লেখ করেন, খুবই আশ্চর্যজনকভাবে আমেরিকা মানবিক সহায়তা খাতে তাদের অর্থ দেওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে। এই ঘটনা ঘটেছে সম্প্রতি। এবং আরও একাধিক ইউরোপীয় দেশও এই ধরনের পদক্ষেপ করেছে। যা দুর্ভাগ্যজনক বলে মনে করেন গুতেরেস।
সংবাদ সংস্থা অ্য়াসোসিয়েট প্রেস (এপি)-এর প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, রোহিঙ্গাদের প্রতি বাকি বিশ্বের একাংশের এই আচরণকে (আর্থিক বরাদ্দ কমানো) 'অপরাধ' বলে উল্লেখ করেন গুতেরেস। একইসঙ্গে তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, যতটা তাঁদের পক্ষে সম্ভব, তাঁরা রোহিঙ্গা শিবিরগুলিতে রেশন-সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্য ও পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন। তিনি জানান, যাতে আরও বেশি করে অর্থ সংগ্রহ করা যায়, তার জন্য আরও বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কথা বলবেন তিনি।
এদিন গুতেরেসের সঙ্গে একই বিমানে কক্সবাজার পৌঁছন মহম্মদ ইউনুস। রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের সময় গুতেরেস সেখানে বসবাসকারী পড়ুয়াদের সঙ্গেও কথা বলেন। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে বর্তমানে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ১২ লক্ষেরও বেশি। তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের জন্য বরাদ্দ অর্থে কাটছাঁট হওয়ায় এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন গুতেরেস।
অন্যদিকে, এদিন কক্সবাজারে যাওয়ার আগেই ঢাকায় ইউনুসের সঙ্গে প্রায় ঘণ্টাখানেক বৈঠক করেন গুতেরেস। ইউনুসের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ মজুমদারের দাবি, কেয়ারটেকার সরকারের সংস্কার সাধনের সিদ্ধান্তের প্রতি পূর্ণ আস্থা প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রসংঘের প্রধান, দিয়েছেন পাশে থাকার আশ্বাস। একইসঙ্গে, এই প্রক্রিয়া 'জটিল হতে পারে বলেও তিনি (নাকি) আশঙ্কা প্রকাশ' করেছেন।