শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট পদে বসার আগেই কি নিজের বিদেশ নীতি নিয়ে ভারত ও চিনকে বিশেষ বার্তা দিতে চেয়েছিলেন অনুরা কুমারা দিসানায়েকে? তাঁর একটি সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকার ঘিরেই এই প্রশ্ন উঠছে। শুরু হয়েছে নয়া জল্পনা।
কী বলেছিলেন তিনি?
গত ৩ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক পত্রিকা 'দ্য মনোকল'কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে অনুরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, শ্রীলঙ্কা কোনও দেশের সঙ্গে সংঘাতে জড়াতে চায় না। পাশাপাশি, কোনও দেশের সঙ্গে আলাদা করে জোটও বাঁধতে চায় না।
অনুরার কথায়, 'আমরা স্যান্ডউইচ হতে চাই না। বিশেষ করে ভারত ও চিনের মধ্যে। এই দুই দেশই আমাদের গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু। আমাদের আশা, তাদের সঙ্গে আমাদের বোঝাপড়া আরও পোক্ত হবে।'
জনতা বিমুক্তি পেরামুনা (জেভিপি) দলের নেতা সেই সাক্ষাৎকারে আরও বলেছিলেন, 'একটি বহুমুখী ব্যবস্থাপনার মধ্যে একাধিক শক্তিশালী শিবির থাকে। আমরা কোনও ভূ-রাজনৈতিক লড়াইয়ে সামিল হতে চাই না। নির্দিষ্ট কোনও পক্ষের সঙ্গে জুড়ে যেতেও চাই না।'
প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগেই গত ৩ সেপ্টেম্বরের সেই সাক্ষাৎকারে ভারত ও চিন প্রসঙ্গে অনুরা জানিয়েছিলেন, 'এনপিপি সরকারের অধীনে আমরা দুই পক্ষেরই আরও কাছাকাছি আসতে চাই। একইসঙ্গে, আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকার সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক স্থাপন করতে চাই। '
শ্রীলঙ্কার নতুন পর্ব
নির্বাচনে ঐতিহাসিক জয়লাভ করে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট পদে বসেছেন অনুরা। তাঁর বিপরীতে ছিলেন সজিত প্রেমদাস এবং আরও ৩৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বী। তাঁদের সকলকে ভোটে হারিয়ে দেশের নতুন প্রেসিডেন্ট হয়েছেন তিনি।
তাঁর এই জয়ের পরই প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন দীনেশ গুনাওয়ারদেনা। যার ফলে অনুরার পক্ষেও নতুন মন্ত্রিসভা গঠন এবং একজন নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের পথ পরিষ্কার হয়ে যায়।
শ্রীলঙ্কার বর্তমান প্রেসিডেন্ট যে রাজনৈতিক দলের নেতা, সেই জেভিপি, যারা এপিপি জোটেরও প্রধান শরিক, তাদের অতীত যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। শ্রীলঙ্কার বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এই দল।
শ্রীলঙ্কাকে যাতে একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তোলা যায়, তার জন্য অতীতেও চেষ্টা করেছে তারা। ১৯৭০ এবং ১৯৮০-এর দশকে দু'বার শ্রীলঙ্কায় সশস্ত্র অভ্যুত্থান ঘটেছিল। সেই দু'বারই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিল জেভিপি।
তবে, তারপর দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয়েছে। আগে এই দলের নেতারা যে কট্টর ভাবধারার সমর্থন করতেন, এখন তাতে অনেকটাই বদল এসেছে। এবং কালক্রমে শ্রীলঙ্কার অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে জেভিপি-র গ্রহণযোগ্যতা ও অংশীদারিত্ব আগের তুলনায় অনেকাংশে বেড়েছে।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিকতম নির্বাচনের পর অনুরা কুমারা দিসানায়েকের জয়ে ভারত এবং চিন, দুই দেশের তরফেই তাঁকে অভিনন্দন জানানো হয়েছিল। দুই দেশেরই আশা, আগামী দিনে দ্বীপরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের সখ্য আরও দৃঢ় হবে।