বিশ্বজুড়ে যখন করোনাভাইরাসের থাবা সকলের কপালে ভাঁজ ফেলেছে, তখন দুই প্রতিবেশি দেশের লড়াইয়ের সাক্ষী থাকছেন মানুষ। আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে সেই সংঘর্ষে ব্যবহৃত হচ্ছে মিসাইল, ট্যাঙ্ক-সহ বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র। করোনার প্রকোপের মধ্যেই সেই সংঘর্ষের ফলে দু'দেশের কত মানুষের প্রাণহানি হতে পারে, তা ভেবেই শিউরে উঠেছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন।
কিন্তু কেন এই যুদ্ধ?
এখানেও ভূখণ্ড দখলের আগ্রাসনই দ্বন্দ্বের মূল কারণ। বিতর্কিত নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চলের দখল নিয়ে দু'দেশের মধ্যে সংঘর্ষের শুরু। আন্তর্জাতিকভাবে সেই অঞ্চলটি আজারবাইজানের অংশ হিসেবে স্বীকৃত। কিন্তু দীর্ঘদিনই অঞ্চলটি আর্মেনিয়ার বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণে আছে। সোভিয়েতের পতনের পর থেকেই সেই দ্বন্দ্ব চলে আসছে। ১৯৯৪ সালে সংঘর্ষ বিরতি চুক্তি হলেও তাতে কোনও লাভ হয়নি। বরং প্রায়শই ওই এলাকায় গুলির লড়াই হয়। নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চলকে স্বাধীন হিসেবে স্বীকৃতি না দিলেও আর্মেনিয়ার সরকার রাজনৈতিক ও সামরিকভাবে সাহায্য প্রদান করে আসছে।
তারইমধ্যে গত ২৭ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে দু'দেশের নতুন করে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। তাতে বিশ্বের একাধিক দেশ নাক গলিয়ে পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল করে তুলছে। মুসলিম-প্রধান আজারবাইজানের হয়ে পাকিস্তানি সেনা যুদ্ধ করছে বলে খবর। সূত্রের খবর, আজারবাইজানকে অস্ত্র জোগাচ্ছে ইজরায়েল। তুরস্ক খোলাখুলিভাবেই আজারবাইজানকে সমর্থন করেছে। এমনকী সিরিয়া থেকে বাকুতে সেনা পাঠানোর কথা বলেছে তুরস্ক।
এদিকে, আর্মেনিয়ায় আবার রাশিয়ার সেনা ঘাঁটি রয়েছে। আর্মেনিয়ার হয়ে লড়াইয়ের জন্য ফৌজি পাঠানোর অভিযোগও উঠেছে ভ্লাদিমির পুতিনের দেশের বিরুদ্ধে। সুতরাং প্রত্যক্ষভাবে না হলেও পরোক্ষভাবে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে অন্যান্য দেশও। তার জেরে স্বভাবতই আন্তর্জাতিক মহলে উত্তেজনার পারদ তুঙ্গে উঠেছে।
আর্মেনিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দাবি, আগে হামলা চালিয়েছে আজারবাইজান। পালটা আজারবাইজানের দুটি হেলিকপ্টার, তিনটি ড্রোন ও তিনটি ট্যাঙ্ক ধ্বংস করেছে। সেই দাবি অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছে বাকু। তাদের দাবি, হামলার মুখে পড়ার পর তারা পালটা হামলা চালিয়েছে। তার ফলে কয়েকটি গ্রাম তাদের নিয়ন্ত্রণে এসেছে। একইসঙ্গে আর্মেনিয়ার ২০ জন ফৌজি, এক ডজন ট্যাঙ্ক ধ্বংসের দাবি করেছে বাকু। এই পরিস্থিতিতে আর্মেনিয়া হুমকি দিয়েছে, প্রয়োজনে পারমাণবিক অস্ত্র এবং রাশিয়ার তৈরি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করতে পিছপা হবে না তারা।
দু'দেশের সঙ্গেই আবার ভারতের ভালো সম্পর্ক আছে। এই পরিস্থিতিতে কোনও পক্ষ না নিয়ে দু'দেশকেই সংযম দেখানোর আর্জি জানিয়েছে নয়াদিল্লি। সংঘর্ষকে ‘উদ্বেগজনক’ হিসেবে চিহ্নিত করে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেন, 'ওই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন ভারত। যা আঞ্চলিক শান্তি ও সুরক্ষার পক্ষে বিপজ্জনক। অবিলম্বে শত্রুতা ছে়ড়ে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিচ্ছি আমরা। সংযম বজায় রাখা হোক এবং সীমান্তে শান্তি বজায় রাখতে যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।'