সিয়াচেনে গত বছর জুলাইয়ে সহকর্মীদের উদ্ধার করতে গিয়ে প্রয়াত হয়েছিলেন ক্যাপ্টেন অংশুমান সিং। সম্প্রতি মরণোত্তর কীর্তিচক্রে সম্মানিত করা হয়েছে তাঁকে। রাষ্ট্রপতি ভবনে তাঁর সেই কীর্তিচক্র গ্রহণ করতে গিয়েছিলেন অংশুমানের বিধনা স্ত্রী স্মৃতি এবং তাঁর মা। এরপরই ক্যাপ্টেন অংশুমানের বাবা-মা অভিযোগ করলেন, ছেলের বিধবা স্ত্রী আর তাঁদের সঙ্গে থাকেন না। কর্তব্যরত অবস্থায় ছেলের মৃত্যুর পর সেনার তরফ থেকে যে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হচ্ছে, তা পাচ্ছেন স্মৃতি। আর আক্ষেপের সুরে অংশুমানের বাবা-মায়ের অনুযোগ, আমাদের কাছে শুধু ছেলের মালা ঝোলানো ছবিটাই রয়ে গিয়েছে। এদিকে অংশুমানের মা অভিযোগ করেন, একসঙ্গে তাঁদের হাতে কীর্তিচক্র তুলে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু স্মৃতি সেই পদক নিজের কাছে নিয়ে চলে গিয়েছেন। (আরও পড়ুন: কোষাগারে টাকার টান, তাও আরও এক দফায় এই রাজ্যের কর্মীদের ডিএ বাড়াল সরকার)
আরও পড়ুন: ১১৯ দিন পর ফের 'আনলাকি' সরকারি কর্মীরা? ১৩-র ফাঁড়া কাটবে কি, বাতলে দেবে '৬০'
আরও পড়ুন: বাড়ল EPFO-র সুদের হার, সরকারের সিদ্ধান্তে পকেট ফুলে উঠল ৭ কোটি চাকরিজীবীর
উল্লেখ্য, সেনায় কর্মরত অবস্থায় প্রয়াত হলে সেই শহিদের নিকটম আত্মীয়কে আর্থিক সাহায্য, পেনশন দিয়ে থাকে সরকার। শহিদ জওয়ান যদি বিবাহিত হন, তাহলে তাঁর নিকটতম আত্মীয় হিসেবে বিবেচিত হন তাঁর স্ত্রী। এই আবহে অংশুমানের মৃত্যুর পর নিকটতম আত্মীয় হিসেবে আর্থিক সাহায্য পাচ্ছেন তাঁর বিধবা স্ত্রী স্মৃতি। তবে অংশুমানের মা-বাবা কিছু পাচ্ছেন না। এই আবহে সরকারের কাছে 'নিকটতম আত্মীয়' নিয়মে বদল আনার আর্জি জানিয়েছেন অংশুমানের বাবা রবি প্রতাপ সিং। (আরও পড়ুন: 'নতুন পিচে খেলা হবে', সুপ্রিম কোর্টের বকেয়া ডিএ মামলায় এল বড় পরিবর্তন)
আরও পড়ুন: ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে 'পুতিন' বলে ডাকলেন বাইডেন, কমলা হলেন 'ট্রাম্প'!
উল্লেখ্য, দীর্ঘ আট বছরের প্রেমের পর গতবছর বিয়ে হয়েছিল অংশুমান এবং স্মৃতির। এর পাঁচ মাস যেতে না যেতেই প্রয়াত হন ক্যাপ্টেন অংশুমান। নিজের সাহসিকতার জন্যে তাঁকে মরণোত্তর কীর্তিচক্র দেওয়া হয়েছে। ভারতীয় সেনার মেডিক্যাল কোরের পঞ্জাব রেজিমেন্টের ২৬ ব্যাটেলিয়নে ছিলেন তিনি। সিয়াচেনে সেনার বিস্ফোরক মজুত রাখার জায়গায় আগুন লেগে গিয়েছিল। সেখান থেকেই সহকর্মীদের বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন অংশুমান।
আরও পড়ুন: নেপালে ভয়াবহ ভূমিধস, ত্রিশূলি নদীতে ভেসে গেল ২টি বাস, নিখোঁজ ৬৩ জন যাত্রী
এদিকে গত শুক্রবার রাষ্ট্রপতি ভবনে অংশুমানের মরণোত্তর কীর্তিচক্র গ্রহণ করে স্মৃতি বলেন, 'কলেজের ফার্স্ট ইয়ারে আমাদের দেখা হয়েছিল। আমি নাটকীয়ভাবে বলছি না। কিন্তু সত্যিই প্রথম দেখায় প্রেম হয়ে গিয়েছিল। এক মাস পরে ও আর্মড ফোর্সেস মেডিক্যাল কলেজে সুযোগ পেয়ে গিয়েছিল। আমাদের দেখা হয়েছিল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে। আর ও মেডিক্যাল কলেজে সুযোগ গিয়েছিল। মারাত্মক বুদ্ধিমান ছেলে। সেই এক মাসের সাক্ষাৎ-পর্বের পরে আট-আটটা বছর আমরা লং-ডিসট্যান্স রিলেশনশিপে ছিলাম। এরপরে বিয়ে করে নিলাম আমরা। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিয়ের দু'মাসের মধ্যে ওকে সিয়াচেনে পোস্টিংয়ে যেতে হয়েছিল। আগামী ৫০ বছর আমাদের জীবন কেমনভাবে কাটবে, তা নিয়ে (২০২৩ সালের) ১৮ জুলাই দীর্ঘক্ষণ কথা হয়েছিল। আমরা বাড়ি তৈরি করব। আমাদের সন্তান হবে। ১৯ জুলাই সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরে আমার কাছে ফোন আসে যে ও আর নেই। প্রথম সাত-আট ঘণ্টা আমরা বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে এরকম কিছু হয়েছে। তারপর আমরা নিশ্চিত হই যে ও আর নেই। তখন থেকে আমরা সেই সেটার সঙ্গে ধাতস্থ হওয়ার চেষ্টা করতাম।'