অবশেষে সুপ্রিম কোর্টে স্বস্তি পেলেন রিপাবলিক টিভির এডিটর-ইন-চিফ অর্ণব গোস্বামী। অর্ণব-সহ আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলায় ধৃত তিনজনকে ৫০,০০০ টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে অবিলম্বে অন্তবর্তীকালীন জামিনে ছাড়ার নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। একইসঙ্গে ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, জামিন না দিয়ে ভুল করেছে বম্বে হাইকোর্ট।
ইন্টিরিয়র ডিজাইনার অন্বয় মালিক এবং তাঁর কুমুদ মালিকের আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলায় অর্ণবের অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের আর্জি খারিজ করে দিয়েছিল বম্বে হাইকোর্ট এবং জামিনের জন্য নিম্ন আদালতে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন দাখিল করেছিলেন অর্ণব।
সকাল ১১ টা নাগাদ থেকে সেই মামলার শুনানি শুরু হয়। অর্ণবের আইনজীবী হরিশ সালভে সওয়াল করেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জন্য অর্ণবকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রত্যক্ষর্শীদের রোজ থানায় ডেকে রিপাবলিক টিভির নাম নিতে বাধ্য করা হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এফআইআরে অভিযোগ করা হয়েছিল যে অন্বয়কে পুরো টাকা মেটানো হয়নি। কিন্তু সেজন্য আত্মহত্যায় প্ররোচনার ধারার যোগ করার বিষয় নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় এবং বিচারপতি ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বেঞ্চ বলে, ‘আমরা ধরে নিচ্ছি যে এফআইআরে যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা ধ্রুব সত্য। তারপরও এটায় কি ৩০৬ ধারার মামলা করা যায়? এরকম বিষয়ে যেখানে কিছুটা অর্থ মেটানো হয়নি। তার ফলে আত্মহত্যা করেছেন। তার মানে কি প্ররোচনা দেওয়া? সেজন্য যদি কাউকে জামিন না দেওয়া হয়, তাহলে সেটা কি বিচারের নামে প্রহসন নয়?’
শীর্ষ আদালত জানায়, যতই মতাদর্শ ভিন্ন হোক না কেন, কাউকে নিশানা করতে পারে না সরকার। ডিভিশন বেঞ্চ বলে, ‘আমরা একজন মানুষের স্বাধীনতার বিষয়ে কথা বলছি। দেশজুড়ে আমরা আজ যদি মামলায় হস্তক্ষেপ না করি, তাহলে আমরা ধ্বংসের পথে হাঁটছি..আপনি একজন মানুষের মতাদর্শ অপছন্দও করতে পারেন। চ্যালেঞ্জ করতে পারেন। যদি আমাদের রাজ্যগুলি মানুষকে দমিয়ে দিতে এরকম করেন, তাহলে সব হাইকোর্টকে মানুষের স্বাধীনতা রক্ষার বার্তা দিতে হবে।’
যদিও মহারাষ্ট্র পুলিশের তরফে আইনীজীবী অমিত দেশাই সওয়াল করেন, অর্ণবকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্টকে দোষ চাপানো যায় না। মহারাষ্ট্র সরকারের আইনজীবী কপিল সিব্বল বলেন, 'এফআইআর হল তথ্য। হয় সেটার তদন্ত করা করুন নাহলে খারিজ করে দিন। কীভাবে শুধু এফআইআরের ভিত্তিতে জামিন মঞ্জুর হয়।' তিনি দাবি করেন, যদি না কোনও অপরাধ হয়, তাহলে এফআইআর খারিজ করে দেওয়া হোক। তাতে বিচারপতি চন্দ্রচূড় জানান, তা হাইকোর্টের সামনে উঠবে।
প্রায় পাঁচ ঘণ্টা শুনানির পর সংক্ষিপ্ত রায়ে দুই সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চ বলে, ‘আমাদের মতে, অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের আবেদন খারিজ করে দিয়ে হাইকোর্ট ভুল করেছেন।’ সেই সঙ্গে অর্ণব-সহ তিনজনের অন্তর্বর্তী জামিন মঞ্জুর করা হয়। একইসঙ্গে তাঁদেের অবিলম্বে জেল থেকে ছাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট।