রাহুল সিং এবং সুনেত্রা চৌধুরী
ঝাড়খণ্ড থেকে শ্রমিকদের জম্মু এবং চন্ডীগড়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ১১ টি ট্রেন চেয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। রাস্তা বানানোর জন্য তারপর তাঁদের চিন সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায় নিয়ে যাওয়া হবে। নাম গোপন রাখার শর্তে এমন কথাই জানালেন তিন আধিকারিক।
প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর লাদাখের চারটি এলাকায় যখন ভারতীয়-চিনা জওয়ানরা কার্যত সংঘাতের মুখে দাঁড়িয়ে তখন এই সিদ্ধান্ত বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। যদিও এক আধিকারিক বলেন, 'যে সংঘাত কয়েক সপ্তাহ ধরে চলতে পারে, তার জন্য রাস্তা তৈরির প্রকল্পের কাজ স্থগিত রাখার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। কাজের মরশুম শুরু হয়ে গিয়েছে এবং আমরা সময় অপচয় করতে পারব না।' তিনি জানান, লাদাখের কৌশলগত দাবরুক, শিয়ক-দৌলেত বেগ ওল্ডি রোডে ইতিমধ্যে কিছু কাজ শুরু হয়েছে।
দ্বিতীয় আধিকারিক জানান, ১১ টি ট্রেনে ১১,৮১৫ জন শ্রমিককে নিয়ে যাওয়া হবে। তারপর তাঁদের লাদাখ, জম্মু এবং কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ডের সীমান্তবর্তী এলাকায় পাঠানো হবে। যেখানে বর্ডার রোডস অর্গ্যানাইজেশন (বিআরও) গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা তৈরি করছে। গত ২২ মে রেল মন্ত্রককে ঝাড়খণ্ড থেকে জম্মু এবং চন্ডীগড়গামী ১১ টি ট্রেন বন্দোবস্ত করারও নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
ওই আধিকারিক আরও জানান, পরবর্তী পর্যায়ের লকডাউন নিয়ে ফোনে কথা বলার সময় শ্রমিকদের বিষয়েও ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের সঙ্গে আলোচনা করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ওই আধিকারিক বলেন, 'অধিকাংশ শ্রমিক দুমকার বাসিন্দা। রাজ্য সরকার কেন্দ্রকে জানাবে, কখন শ্রমিকরা যেতে পারবেন এবং সীমান্ত এলাকায় কাজ করতে পারবেন।'
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা জানিয়েছেন, লকডাউনের সময়ে আটকে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকদের যাতাযাতের জন্য গত ১৯ মে যে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর (এসওপি) জারি করা হয়েছে, সেই অনুযায়ী ওই ১১ টি ট্রেন চলবে।
গত ২৮ এপ্রিলই হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছিল, করোনাভাইরাস মহামারী সত্ত্বেও চিন সীমান্তের কাছে দুর্গম এলাকাগুলিতে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা এবং টানেল নির্মাণের কাজের জন্য ৪০,০০০ জন পর্যন্ত শ্রমিককে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে বিওআরের।
চিন বিশেষজ্ঞ এবং জাতীয় সুরক্ষা উপদেষ্টা বোর্ডের এক সদস্য বলেন, 'সামরিক এবং নাগরিক উভয় কারণেই সীমান্তবর্তী এলাকা বরাবর পরিকাঠামোর উন্নতির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। (নির্দিষ্ট) পরিকল্পনা অনুযায়ী আমাদের দিকে পরিকাঠামো তৈরির কাজ চলবে।'
সেই কাজে ইতিমধ্যে সবুজ সংকেত দিয়েছে লাদাখ প্রশাসন। গত ১৫ মে বিআরও-কে চিঠি লিখে তাদের তরফে জানানো হয়েছে, সীমান্তবর্তী এলাকায় কাজের জন্য শ্রমিক নিযুক্ত করার ক্ষেত্রে কোনও আপত্তি নেই। তবে লাদাখে পৌঁছানোর পর শ্রমিকদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে এবং নির্মাণ কাজের সময় কঠোরভাবে সামাজিক দূরত্বের বিধি মেনে চলা হবে।
উল্লেখ্য, সীমান্তের রাস্তা তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার কাজের প্রধান সময় মে'তে শুরু হয়। চলে নভেম্বর পর্যন্ত। লাদাখ, জম্মু ও কাশ্মীর, উত্তরাখণ্ড, হিমাচল প্রদেশ, অরুণাচল প্রদেশ এবং সিকিমে সেইসব কৌশলগত রাস্তা তৈরির ক্ষেত্রে পরিযায়ী শ্রমিকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সীমান্ত লাগোয়া এলাকায় জওয়ান ও সামগ্রীর দ্রুত পৌঁছানোর জন্য চিনের সীমান্ত বরারর যে ৬১ টি কৌশলগত রাস্তা তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তা ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করতে চায় বিআরও।