২১ জন স্কুল পড়ুয়ার উপর যৌন নির্যাতন! টানা আট বছর ধরে এই অপকর্ম করে গিয়েছে হস্টেলের ওয়ার্ডেন! তার এই ঘৃণ্য আচরণের জন্য তাকে মৃত্যুদণ্ড দিল আদালত।
বৃহস্পতিবার অরুণাচলপ্রদেশের ইউপিয়ায় একটি বিশেষ পকসো আদালতের বিচারক এই শাস্তি ঘোষণা করেন। আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, একটি সরকারি আবাসিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের সঙ্গে এই বিকৃত এবং নৃশংস আচরণ করেছে সেই সময় ওয়ার্ডেনের দায়িত্বে থাকা ওই ব্যক্তি।
এই ঘটনায় অভিযুক্ত আরও দু'জনকে আদালত দোষী সাব্যস্ত করেছে। তাদের দু'জনকেই ২০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এই দু'জন হল, হিন্দি ভাষার একজন শিক্ষিকা এবং একজন প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক। তারা দু'জনই শি ইয়োমি জেলার ওই একই স্কুলে কর্মরত ছিল।
এই দু'জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তারা গোটা ঘটনায় প্রশ্রয় দিয়েছে এবং যথাযথ পদক্ষেপ করতে ব্যর্থ হয়েছে। আদালত সেই অভিযোগ সঠিক বলে রায় দিয়েছে।
নিগৃহীত ২১ পড়ুয়ার তরফে মামলাটি লড়েন ওয়াম বিংগেপ। তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, 'আদালতের সিদ্ধান্তে আমরা খুশি। আদালতের কাছে আমরা আবেদন জানিয়েছিলাম, যাতে এই ঘটনায় দোষীদের কঠোরতম এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয়। আদালত আমাদের সেই আর্জি মঞ্জুর করেছে।'
ওই আইনজীবী আরও জানিয়েছেন, 'পকসো আইনের অধীনে এই প্রথম এমন কোনও দোষী ব্যক্তিকে ফাঁসির সাজা শোনানো হল, যে নিগৃহীতদের উপর চূড়ান্ত যৌন নির্যাতন চালিয়েছে, কিন্তু আক্রান্ত কারও মৃত্যু ঘটেনি।'
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, গত মঙ্গলবারই ভারতীয় দণ্ডবিধি এবং পকসো আইনের একাধিক ধারায় অভিযুক্ত তিনজনকে দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন বিশেষ পকসো আদালতের বিচারক জাওয়েপ্লু চায়।
তবে, এই মামলায় আরও দুই অভিযুক্ত ছিলেন। তাঁদের বেকসুর খালাস করা হয়েছে। এঁরা হলেন, সংশ্লিষ্ট স্কুলেরই আর একজন শিক্ষক এবং হস্টেলের ওয়ার্ডেনের পরিচিত আরও এক ব্যক্তি।
এই দুই মুক্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তির মধ্যে প্রথমজনের বিরুদ্ধেও যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু, আদালতে শুনানি চলাকালীন সেই অভিযোগ থেকে সরে আসে নিগৃহীতরা।
অন্যদিকে, দ্বিতীয় জনের বিরুদ্ধে দাবি করা হয়েছিল, হস্টেলের ওয়ার্ডেন গ্রেফতার হওয়ার আগে, অভিযুক্ত ওয়ার্ডেনকে তিনি আশ্রয় দিয়েছিলেন। কিন্তু, ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ আদালতে প্রমাণিত হয়নি।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে এই ঘটনার প্রথম প্রকাশ্যে আসে। এক ব্যক্তি লিখিত অভিযোগ দায়ের করে জানান, তাঁর ১২ বছরের যমজ কন্যাদের উপর সংশ্লিষ্ট আবাসিক স্কুলের হস্টেলের ওয়ার্ডেন যৌন নির্যাতন চালিয়েছে।
পরবর্তীতে এই অভিযোগের তদন্তের জন্য বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট গঠন করা হয়। তদন্তে প্রমাণিত হয়, অভিযুক্ত ওয়ার্ডেন অন্তত ২১ জন পড়ুয়ার উপর যৌন নির্যাতন চালিয়েছে।
আক্রান্তদের মধ্যে ছাত্রীদের পাশাপাশি ছ'জন ছাত্রও ছিল। আক্রান্তদের সকলেরই বয়স ৬ বছর থেকে ১৪ বছরের মধ্যে। ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত হস্টেলের ওয়ার্ডেন থাকাকালীন এই পৈশাচিক কাণ্ড ঘটিয়েছিল ওই দোষী ব্যক্তি।
গত বছর জুলাই মাসে এই মামলার চার্জশিট পেশ করা হয়। তাতে উল্লেখ করা হয়, ছাত্রছাত্রীদের উপর যৌন নির্যাতন করার আগে তাদের মাদক খাইয়ে দিত ওই ওয়ার্ডেন।
এমনকী, পরে যাতে তারা মুখ না খোলে, তার জন্য আক্রান্তদের ভয়ও দেখাত। যার জেরে আক্রান্তদের মধ্যে ছ'জন আত্মহত্যারও চেষ্টা করেছিল।