আগামীকাল বুধবার দিল্লির বিধানসভা নির্বাচন। এক দফাতেই সম্পন্ন হবে দিল্লি বিধানসভা ৭০টি কেন্দ্রের নির্বাচন। তার আগে নির্বাচনী প্রচার শেষ হয়েছে সোমবার। এদিন একের পর এক বিশাল রোড শো এবং জনসভার মধ্য দিয়ে দলের প্রচার শেষ করেছেন আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল। দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রচারের শেষ দিনের দাবি করেছেন এবার ও দিল্লিতে ক্ষমতায় ফিরবে আপ।
আরও পড়ুন: দিল্লিতে ভোটের ৪ দিন আগে বিজেপিতে যোগ আপ ছেড়ে আসা ৮ বিধায়কের, কোন কোন কেন্দ্রের MLA এঁরা?
এদিন কেজরিওয়াল বলেছেন, আপ এবার বিধানসভা নির্বাচনে নয়াদিল্লি, জঙ্গপুরা এবং কালকাজি আসন সহ ৫৫টি আসন জিতবে। কেজরিওয়াল নয়াদিল্লি আসন থেকে টানা চতুর্থবারের জন্য প্রার্থী হচ্ছেন। পাটপরগঞ্জের তিনবারের বিধায়ক মণীশ সিসোদিয়া এখন জঙ্গপুরা আসন থেকে লড়ছেন। অন্যদিকে, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী আতিশী কালকাজি আসন থেকে টানা দ্বিতীয়বারের জন্য প্রার্থী হচ্ছেন। এদিন কেজরিওয়াল বলেন, ‘অনেকেই আমাকে জিজ্ঞাসা করেছেন যে আপ কত আসন পেতে চলেছে। আমার অনুমান অনুসারে, আমরা ৫৫টি আসন পেতে যাচ্ছি। কিন্তু, মহিলারা যদি আরও জোর দেন তবে এটি ৬০টি আসন পর্যন্ত যেতে পারে। আমি মহিলাদের কাছে আবেদন করছি যে তারা তাদের পরিবারের পুরুষদের বোঝান যে বিজেপি ধনীদের দল। কেবল কেজরিওয়ালই আপনাকে সাহায্য করবেন।আমি আপনার সন্তানদের জন্য ভালো স্কুল তৈরি করব, মহিলাদের জন্য বিনামূল্যে বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্যসেবা এবং বাস ভ্রমণের ব্যবস্থা করব এবং মহিলাদের প্রতি মাসে ২,১০০ টাকা করে দেব।’ সোমবার সন্ধ্যায় কালকাজি নির্বাচনী এলাকায় নিজের শেষ রোড শো শেষ করার পর এক সংবাদ সম্মেলনে এই বক্তব্য রাখেন কেজরিওয়াল।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ভোটে আম আদমি পার্টি ৬২ আসন জিতেছিল। প্রধান বিরোধী দল বিজেপি জেতে আটটি আসন, শূন্য পায় কংগ্রেস। তার আগের বারও, অর্থাৎ ২০১৫ সালেও খাতা খুলতে পারেনি কংগ্রেস। সেবার ৭০ আসনের মধ্যে ৬৭টি জিতে প্রথমবারের জন্য নিজেদের শক্তিতে সরকার গড়েছিলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তার আগে কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন তিনি, যদিও মাত্র ৪৯ দিনের মাথায় সেই সরকারের মেয়াদ ফুরিয়েছিল। এবার যদিও আপ-এর সামনে কঠিন লড়াই। দুর্নীতির অভিযোগ, প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা ছাড়াও অষ্টম পে কমিশন ও আয়কর ছাড়ের মত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে মধ্যবিত্তদের মন জয় করতে মরিয়া বিজেপি। লড়াই যে কঠিন, এদিন কেজরিওয়ালের কথাতেও প্রকারন্তরে সেটির ইঙ্গিত পাওয়া গেল।
অন্যদিকে, মণীশ সিসোদিয়া জঙ্গপুরায় একটি বাইক র্যালির নেতৃত্ব দেন। এছাড়া, ভগবন্ত মান শালিমার বাগ, শাকুর বস্তি এবং উজিরপুরে রোড শো করেন এবং আদর্শ নগরে একটি জনসভা করেন। সেখানে তিনি বলেন, যে আপ দিল্লির প্রতিটি বাসিন্দাকে প্রতি মাসে ২৫০০০ টাকা সাশ্রয় করতে সাহায্য করছে এবং যদি বিজেপি ক্ষমতায় আসে, তাহলে তারা আপের কল্যাণমূলক প্রকল্পগুলি বন্ধ করে দেবে। যদিও এই দাবি বিজেপি বারবার অস্বীকার করেছে।
এদিকে, ছত্তরপুর নির্বাচনী এলাকায় এক জনসভায় কেজরিওয়াল আপের কাজের খতিয়ান তুলে ধরেন। ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা, বিশ্বমানের সরকারি স্কুল, মহল্লা ক্লিনিকের মাধ্যমে বিনামূল্যে জনস্বাস্থ্যসেবা এবং বিনামূল্যে বাস ভ্রমণের মাধ্যমে মহিলাদের নিরাপত্তা এবং চলাচলের বিভিন্ন প্রকল্পের কথা তুলে ধরেন। কেজরিওয়াল বলেন, ‘বিজেপি ঘোষণা করেছে যে তারা ক্ষমতায় এলে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ, বিনামূল্যে জল, সরকারি স্কুল, মহল্লা ক্লিনিক এবং মহিলাদের জন্য বিনামূল্যে বাস ভ্রমণ বন্ধ করে দেবে। কিন্তু, বিজেপি ক্ষমতায় এলে আপনাদের প্রতি মাসে ২৫,০০০ টাকার ক্ষতি হবে।’
কালকাজিতে রোড শো চলাকালীন, কেজরিওয়াল দাবি করেন, বিজেপি ক্ষমতায় এলে ৬ মাসের মধ্যে দিল্লির সমস্ত ঝুপড়ি ভেঙে ফেলবে। বিজেপিকে ভোট না দেওয়ার জন্য তিনি অনুরোধ করেন। তিনি নাগরিকদের সতর্ক করে বলেন, ‘যে জমিতে আপনাদের বস্তি তৈরি হয়েছে তার মূল্য কয়েকশো কোটি টাকা। বিজেপি এটি মুম্বইয়ের ধারাভির মতো বিল্ডার এবং তাদের বন্ধুদের হাতে তুলে দিতে চায়। আপনি যদি পদ্ম বোতাম টিপেন তাহলে তারা আপনাকে রাস্তায় ফেলে দেবে। যতক্ষণ আমি এখানে আছি, আমি আপনার জন্য লড়াই করব।’
এদিকে, আপ প্রধানের বস্তি ভাঙার বিষয়ে বিজেপি আপত্তি তুলে জানিয়েছে, কেজরিওয়াল বস্তি ভাঙার বিষয়ে মিথ্যা প্রচার করছেন। উল্লেখ্য, রবিবার এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, যে বিজেপি ক্ষমতায় এলে একটিও বস্তি ভাঙা হবে না এবং পরিবর্তে বস্তিবাসীদের পাকা ঘর দেওয়া হবে।