ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে অসমে। নাগাড়ে বৃষ্টির জেরে এমন ভয়ঙ্কর অবস্থা তৈরি হয়েছে। তার জেরে ৩০ জন মানুষ মারা গিয়েছেন। বানভাসী পরিস্থিতিতে পড়ে রয়েছেন ১.৬১ লাখ মানুষজন। ১৫টি জেলাজুড়ে এমন কঠিন অবস্থা দেখা গিয়েছে। এই বন্যার জেরে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয়, তার সঙ্গে বেড়েছে ধস। এই ধস নেমেছে করিমগঞ্জ জেলার বদরপুর অঞ্চলে। তাতে পাঁচজন মানুষ মারা গিয়েছেন বলে খবর। এদের মধ্যে একজন মহিলা, তাঁর তিন মেয়ে এবং তিন বছরের পুত্রসন্তান রয়েছে। মর্মান্তিক এই বন্যায় অসম জুড়ে শোনা যাচ্ছে শুধুই হাহাকার এবং স্বজন হারানোর কান্না।
এদিকে মঙ্গলবার রাতে বড়রকমের ধস নেমেছে গৈনাচোরা গ্রামে। এই ধস নামার ফলে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩০টির বেশি। মে মাসে রেমাল ঘূর্ণিঝড়ের সময় থেকে এখন পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা ৩০ ছাড়িয়েছে। এই বিষয়ে করিমগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার পার্থপ্রতিম দাস বলেন, ‘গতকাল মাঝরাতে খবর আসে ধস নেমেছে গৈনাচোরা গ্রামে। যেটা বদরপুর থানার অন্তর্গত। এই খবর আসার পরই বদরপুর থানার ওসি কর্মীদের নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। সেখানে পৌঁছেছে এসডিআরএফ বাহিনী। যৌথভাবে উদ্ধারকাজ শুরু হয়েছে। তিন ঘণ্টা উদ্ধারকাজ চালানোর পর ধ্বংসস্তূপ থেকে পাঁচজন মানুষের দেহ উদ্ধার করে।’
আরও পড়ুন: ‘আমিও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করতে পারি’, ফের বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন সৌমিত্র খাঁ
অন্যদিকে নাগাড়ে বৃষ্টির সঙ্গে ঝড় পর্যন্ত চলছে অসমে। আর যে পাঁচজনের দেহ উদ্ধার করা হয়েছে তাদের চিহ্নিত করা গিয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, নিহত মানুষজন হচ্ছে—রয়মুন নেসা (৫৫), তাঁর তিনজন মেয়ে শাহিদা খানাম (১৮), জাহিদা খানাম (১৬), হামিদা খানাম (১১)। আর পুত্রসন্তানের নাম মেহেদি হাসান (৩)। এই বন্যায় আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। বাড়িঘর, গবাদি পশু, চাষের জমি সব জলের তলায় চলে গিয়েছে। অসম বিপর্যয় মোকাবিলা কর্তৃপক্ষ সূত্রে খবর, করিমগঞ্জ জেলা বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার জলের তলায় আছেন ১ লক্ষ ৫২ হাজার ১৩৩ জন মানুষ।
এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের জেরে ১,৩৭৮.৬৪ হেক্টর চাষের জমি জলের তলায় চলে গিয়েছে। ৫৪ হাজার ৮৭৭টি গবাদি পশুও জলের তলায় চলে গিয়েছে। এখন ৪৭০টি গ্রাম এবং ২৪টি রেভিনিউ সার্কেল জুড়ে গিয়েছে। উদ্ধারকাজ এখনও চলছে। ৫ হাজার ১১৪ মানুষকে আশ্রয় শিবিরে নিয়ে আসা হয়েছে। ৪৩টি ত্রান শিবির খোলা হয়েছে। এই বন্যার জেরে গ্রামের পরিকাঠামো, রাস্তাঘাট, সেতুর ভয়ানক ক্ষতি হয়েছে। যাবতীয় সাহায্য করা হচ্ছে। এখানের কপিলি নদী বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। এই বন্যায় ব্যাপক প্রভাব পড়েছে বিশ্বনাথ, লখিমপুর, হোজাই, বনগাঁইগাঁও, নলবাড়ি, তামূলপুর, উদলগুড়ি, দারাং, ধেমাজি, হায়লাকান্দি, করিমগঞ্জ, গোয়ালপাড়া, নগাঁও, চিরঙ্গ এবং কোকরাঝাড়।