জাতীর জনক মহাত্মা গান্ধীর জন্ম–মৃত্যুর দিন প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে বিজেপি নেতাদের ঘটা করে শ্রদ্ধার্ঘ্য প্রদর্শন করতে দেখা যায়। নরেন্দ্র মোদীকে তা নিয়ে নানা কথা বলতেও শোনা যায়। সেখানে এবার সবে এসেছে এনডিএ সরকার। আর অসমে ডবল ইঞ্জিন সরকার। আর এই অসমের চা শহর ডুমডুমা থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে মহাত্মা গান্ধীর মূর্তি বলে অভিযোগ। আর এই ঘটনায় দেখা দিয়েছে ব্যাপক বিতর্ক। মহাত্মা গান্ধীর মূর্তি সরিয়ে ফেলায় প্রতিবাদে ছাত্র সংগঠনের নেতারা বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। তিন দিন আগে অসমের তিনসুকিয়া জেলার গান্ধী চক এলাকা থেকে ৫.৫ ফুট গান্ধীর মূর্তি সরিয়ে ফেলা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা একদা কংগ্রেস করতেন। পরে বিজেপিতে যোগ দিয়ে অসমের মুখ্যমন্ত্রী পদে আসীন হন। এই আবহে তাঁর প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড নিয়েও প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। কেন সরানো হল জাতীর জনকের মূর্তি? এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলেন, ‘এই বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। জেলা প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত আমার অজানা। তবে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি। মহাত্মা গান্ধীর কাছে অনেক ঋণী অসম। তিনি ভারতরত্ন গোপীনাথ বর্দোলোইয়ের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়েছিলেন যখন নেহরু নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস পরিকল্পনা করে অসমকে পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত করতে চেয়েছিল।’
আরও পড়ুন: অসুস্থ হয়ে পড়েছেন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী, রাজনাথ সিং ভর্তি এইমস হাসপাতালে
এদিকে এই ঘটনার বিক্ষোভ বাড়তে শুরু করেছে অসমে। গান্ধী মূর্তি সরে যাওয়ার তীব্র প্রতিবাদ শুরু করেছে অসমের ছাত্র সংগঠন অল অসম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন। তাঁদের অভিযোগ, ইচ্ছা করেই ক্লক টাওয়ার নির্মাণের জন্য মহাত্মা গান্ধীর মূর্তি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ছাত্র সংগঠনের এক নেতার কথায়, ‘আমরা যখন পুরবোর্ড ও টাউন কমিটির কর্তাদের সঙ্গে দেখা করি তখনই তাঁরা আমাদের জানিয়ে দেন একটি ক্লক টাওয়ার নির্মাণের পরিকল্পনা চলছে। গান্ধী মূর্তি সরানোর আগে কেন এখানকার সুশীল সমাজের মতামত নেওয়া হল না?’ এই ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে গান্ধীজির প্রপৌত্র তুষার গান্ধী বলেন, ‘ডিব্রুগড়ে একটি ক্লক টাওয়ার তৈরি করার জন্যই বিজেপি সরকার বাপুর মূর্তি সরিয়ে ফেলেছে। সত্যিই অবাক হওয়ার মতো ঘটনা।’
অন্যদিকে এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই অসম জুড়ে আন্দোলন শুরু হয়েছে। কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন বিধায়ক দুর্গা ভূমিজের বক্তব্য, ‘আমরা শহর সৌন্দর্যায়নের বিরুদ্ধে নই। কিন্তু সেটা করতে কি মহাত্মা গান্ধীর মূর্তি সরিয়ে ফেলতে হবে? এটা আমরা বরদাস্ত করব না। মহাত্মা গান্ধীর মূর্তিটি রেখেই ক্লক টাওয়ার নির্মাণ করতে হবে।’ চাপে পড়ে ডুমডুমার বিজেপি বিধায়ক রূপেশ গোয়ালা বলেন, ‘আগামী ৬ মাসের মধ্যে নতুন মূর্তি তৈরি করে আসল জায়গায় স্থাপন করা হবে। নতুন মূর্তিটি আগের থেকে এক ফুট বেশি লম্বা হবে। ক্লক টাওয়ারের পাশেই তা স্থাপন করা হবে। গান্ধীজির ভাঙা পুরনো মূর্তি থাকা কি ঠিক? আমরা তাই এটি সরিয়ে ফেলেছি। আর আগের থেকে বড় ও সুন্দর মূর্তি স্থাপন করা হবে। কিছু মানুষ বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি করছেন।’