বন্যায় প্লাবিত অসমের খনি থেকে শনিবার আরও তিনটি মৃতদেহ উদ্ধার করা হল। এই নিয়ে সোমবারের বিপর্যয়ের পর থেকে মোট ৪ জনের দেহ এখনও পর্যন্ত উদ্ধার করা হয়েছে। এখনও এই খনিতে আরও অন্তত ৫ জন নিখোঁজ আছেন। এই আবহে আশঙ্কা করা হচ্ছে, আদৌ আর কেউ সেখানে বেঁচে আছে কি না। এরই সঙ্গে প্রশ্ন উঠছে, খনিতে কি শুধুমাত্র ৯ জনই ছিলেন? এই সব অবৈধ খনিতে এমনিতেই কোনও রেকর্ড রাখা হয় না। এই আবহে খনিতে থাকা শ্রমিকদের নির্দিষ্ট সংখ্যা নিয়ে নিশ্চিত ভাবে কিছু বলতে পারছে না প্রশাসন। জাতীয় দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া বাহিনী (এনডিআরএফ), সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং স্থানীয় পুলিশের কর্মীরা বিগত ৬ দিন ধরে এই খনিতে উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে শুক্রবার কোল ইন্ডিয়ার ১২ সদস্যের একটি বিশেষ উদ্ধারকারী দল অসমের ডিমা হাসাওতে খনি ধসের এলাকায় পৌঁছেছে। (আরও পড়ুন: অমৃত ভারতের কাজ চলাকালীন রেল স্টেশনে বড়সড় বিপত্তি, ভেঙে পড়ল বিল্ডিং, আটকে বহু)
উল্লেখ্য, গত ৬ জানুয়ারি এই খনিতে দুর্ঘটনার জেরে আটকে পড়েছিলেন ৯ জন শ্রমিক। শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে সেই খনি থেকে দ্বিতীয় মৃতদেহটি উদ্ধার করে এনডিআরএফ টিম। সকালে খনির ভেতরে জলস্তর পরীক্ষা করার সময় একটি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। মৃতদেহটি জলে ভাসছিল। যে শ্রমিকের দেহ উদ্ধার হয়েছে, তাঁর নাম লিজিয়ন মাগার, বয়স ২৭ বছর। তিনি ডিমা হাসাও জেলার উমরাঙ্গোর বাসিন্দা। এরপর শনিবার ড্রোন ব্যবহার করে এই ৩০০ ফুট গভীর খনিতে আরও দু'টি মৃতদেহ চিহ্নিত করা সম্ভব হয়। পরে ডুবুরি নামিয়ে সেই দু'টি দেহ উদ্ধার করা হয়। সেই দু'জন মৃত শ্রমিকের নাম হল - কোকরাঝাড় জেলার খুশি মোহন রাই (৫৭) ও শোণিতপুর জেলার শরৎ গোয়ারি (৩৭)। এখনও খনিতে নিখোঁজ রয়েছেন অসমের দরং জেলার হুসেন আলি (৩০), জাকির হুসেন (৩৮), মুস্তাফা শেখ (৪৪), কোকরাঝাড় জেলার সরপা বর্মন (৪৬) এবং পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার সঞ্জিত সরকার (৩৫)।
এনডিআরএফ টিম কমান্ডার জানিয়েছেন, প্রতিদিন সকালে জলের স্তর পরীক্ষা করার কাজ চলেছে। এখন খনির ভেতরে জলস্তর ৬ মিটার নীচে নেমেছে। খনির জল বের করতে লাগাতার ৫টি পাম্প ব্যবহার করা হচ্ছে। এর আগে গত বুধবার সকালে সেনাবাহিনীর ২১ প্যারা-র ডুবুরিরা প্রায় ৩০০ ফুট গভীরে গিয়ে প্রথম মৃতদেহটি উদ্ধার করেছিল। সেই শ্রমিকের নাম ছিল গঙ্গা বাহাদুর শ্রেষ্ঠ। তিনি নেপালের উদয়পুরের বাসিন্দা ছিলেন। ডুবুরিরা জানান, গঙ্গা বাহাদুরের দেহ খনির তলায় একটি ট্রলির নীচে আটকা পড়েছিল।
এদিকে কেন্দ্রীয় কয়লামন্ত্রী জি কিষাণ রেড্ডির সাথে উদ্ধার অভিযান নিয়ে কথা হয়েছে অসমের মুখ্যমন্ত্রী। এই অবৈধ খনি পারিচালনার নেপথ্যে থাকা দোষীদের ধরার নির্দেশ দিয়েছিলেন হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। এরপরই পুলিশের তরফ থেকে একজনকে গ্রেফতার করা হয়। ঘটনা প্রসঙ্গে হিমন্ত বলেছিলেন, 'এখনও পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে ৯ জনের পরিবার যোগাযোগ করেছে। তবে যদি এমন কোনও ব্যক্তি সেই খনিতে ঢুকে থাকে যাঁর কোনও পরিবার নেই, বা তিনি কাউকে না জানিয়েই খনিতে গিয়েছিলেন, তাহলে তাঁর বিষয়ে এখন জানার কোনও উপায় নেই।'