ভারতবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে এক পাকিস্তানি-সহ বেশ কয়েকজন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করল অসম পুলিশ। রবিবার এই বিষয়টি নিয়ে রাজ্য মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তারপরই আজ - অর্থাৎ - সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫) এই এফআইআর দায়ের করা হয়। অভিযুক্ত ওই পাকিস্তানির নাম - আলি তৌকির শেখ।
রবিবার রাজ্য মন্ত্রিসভা আলির বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার জন্য রাজ্য পুলিশকে নির্দেশ দেয়। লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, অভিযুক্ত আলির সঙ্গে কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈয়ের স্ত্রী এলিজাবেথের সম্পর্ক রয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, এলিজাবেথ নিজে একজন ব্রিটিশ নাগরিক। অসম মন্ত্রিসভার নির্দেশ, পুলিশ প্রশাসনকে খতিয়ে দেখতে হবে - এলিজাবেথের সঙ্গে আলির তথাকথিত এই সম্পর্কের ফলে ভারতের সার্বভৌমত্বের সঙ্গে কোনও আপস করা হয়েছে কিনা।
সোমবার এই বিষয়টি নিয়ে নিজের এক্স হ্য়ান্ডেল পোস্টও করেছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। তিনি জানিয়েছেন, রাজ্য মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুসারে এদিন রাজ্য পুলিশের পক্ষ থেকে আলি-সহ কয়েকজন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছে।
ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (বিএনএস)-এর সংশ্লিষ্ট ধারা এবং বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধী) আইন অনুসারে এই পদক্ষেপ করা হয়েছে। সাধারণত, ভারতের মাটিতে থেকে ভারতের সার্বভৌমত্ব, একতা ও অখণ্ডতাবিরোধী কোনও অপরাধমূলক কার্যকলাপে জড়িত থাকলে অথবা ভারতের বিরুদ্ধে কোনও ষড়যন্ত্রে যুক্ত থাকলে কিংবা কোনও বেআইনি কাজ করলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে এই আইন প্রয়োগ করা হয়।
প্রসঙ্গত, এই ঘটনায় অভিযুক্ত আলি তৌকির শেখ 'লিড পাকিস্তান' নামে একটি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা। যে সংগঠন মূলত আবহাওয়া ও জলবায়ু নিয়ে কাজ করে। রবিবার মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা অভিযোগ করেন, ইসলামাবাদে থাকাকালীন এলিজাবেথ গগৈ এই 'লিড পাকিস্তান' সংগঠনটির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন।
হিমন্তের আরও দাবি, 'ক্লাইমেট অ্য়ান্ড ডেভলপমেন্ট নলেজ নেটওয়ার্ক' (সিডিকেএন) নামে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা রয়েছে। এলিজাবেথ এবং আলি - দু'জনই এই সংস্থার সঙ্গে যুক্ত। এবং এই সংস্থা ভারত ও পাকিস্তান - দুই দেশেই সক্রিয় রয়েছে।
অসমের মুখ্যমন্ত্রীর আরও বক্তব্য, ব্যাপক পরিসরে এবং জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নেই (বিশেষত অসমের সুরক্ষার প্রশ্নে) রাজ্য মন্ত্রিসভা অসম পুলিশের ডিজি-কে আলির বিরুদ্ধে, ভারতীয় ন্যায় সংহিতার নির্দিষ্ট ধারা অনুসারে এফআইআর করার নির্দেশ দিয়েছে।
এবং পুলিশকে আরও খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে, আলি ও এলিজাবেথ যে সংস্থার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন, সেই সংস্থা কোনওভাবে অসম কিংবা দেশের অন্য কোথাও ভারতবিরোধী কোনও কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে কিনা, বা এই ধরনের কোনও কিছুকে প্রশ্রয় দিচ্ছে কিনা।
এই বিষয়ে তদন্ত চলাকালীন পুলিশের পক্ষ থেকে অসম এবং কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও সংস্থার সাহায্য নেওয়া হতে পারে। হিমন্তের বক্তব্য, যেহেতু অতীতেও অসমকে কেন্দ্র করে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই ভারতবিরোধী কার্যকলাপ চালিয়েছে, তাই গোটা বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে দেখা হবে।
হিমন্ত আশা প্রকাশ করেছেন, গৌরব গগৈয়ের স্ত্রী এলিজাবেথ তদন্তকারীদের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা করবেন এবং তাঁর পাসপোর্ট, ভিসা ও ভ্রমণ সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য এবং নথি সামনে আনবেন।