নামেই একবিংশ শতাব্দী! আমাদের এই 'জিডিট্যাল ইন্ডিয়া'-এ এখনও যে কত কুসংস্কার আর অপসংস্কৃতি শিকড় ছড়িয়ে রয়েছে, ফের একবার তার প্রমাণ পাওয়া গেল। অভিযোগ, একজন দলিত ব্যক্তির হাত থেকে প্রসাদ খাওয়ার 'অপরাধে' এলাকার অন্তত ২০টি পরিবারকে সংশ্লিষ্ট গ্রাম থেকে বহিষ্কৃত করে দেওয়া হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে মধ্যপ্রদেশের ছাতারপুর জেলায়।
টাইমস অফ ইন্ডিয়া-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, অন্য়ায়ের শিকার ওই পরিবারগুলিও চুপ করে বসে থাকেনি এরপর। ওই ২০টি পরিবারের সদস্যরা সরাসরি পুলিশ সুপার অগম জৈনের দ্বারস্থ হয়েছেন। আক্রান্তদের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান তাঁদের বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করে গ্রাম থেকে তাঁদের বহিষ্কার করেছেন।
যদিও পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, তিনি অভিযোগ পেয়েছেন। তবে, সেটা এক পক্ষের নয়। সংশ্লিষ্ট দুই পক্ষই তাঁর কাছে অভিযোগ দায়ের করেছে। পুলিশ সুপার বলেন, 'আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিকদের কাজে লাগানো হয়েছে।'
অভিযোগ, ন্যক্কারজনক এই ঘটনাটি ঘটেছে জেলার আটরার গ্রামে। ভোপাল থেকে যার দূরত্ব প্রায় ৩২০ কিলোমিটার। এবং জেলা সদর থেকে এই গ্রামের দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার।
ঘটনা প্রসঙ্গে জানা গিয়েছে, ২০২৪ সালের ২০ অগস্ট স্থানীয় তালাইয়া হনুমান মন্দিরে প্রসাদ বিতরণ করছিলেন জগৎ আহিরওয়ার নামে এক ব্যক্তি। তাঁর মানত পূর্ণ হওয়ায় মন্দিরে পুজো দিয়েছিলেন তিনি। ভোগ হিসাবে লাড্ডু অর্পণ করেছিলেন আরাধ্যকে। সেই লাড্ডুই তিনি সকলের মধ্যে বিতরণ করেন।
গ্রামের ২০ জনেরও বেশি বাসিন্দা সেই প্রসাদ খেয়েছিলেন। এবং তাঁরা বিভিন্ন জাতের মানুষ। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন ব্রাহ্মণ এবং অন্যান্য 'উঁচু জাতের' লোকজনও ছিলেন।
পরে যখন খবর ছড়িয়ে পড়ে, উঁচু জাতের লোকেরা একজন দলিতের হাত থেকে প্রসাদ খেয়েছেন, এরপরই বাকি উঁচু জাতের লোকজন সেই প্রসাদ খাওয়া ব্যক্তি ও তাঁদের পরিবারকে সামাজিকভাবে বয়কট করতে শুরু করেন!
সেই সময় থেকেই তাঁদের আর কোনও অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয় না। বাধ্য হয়েই পুলিশ সুপারের কাছে সরাসরি অভিযোগ করেন আক্রান্তরা। কিন্তু, স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপের পরও পরিস্থিতি বদলায়নি বলে অভিযোগ।
স্থানীয় একটি সূত্র যদিও বলছে, এই ঘটনা শুধুমাত্র অপসংস্কৃতি নয়। এর পিছনে রাজনীতিও থাকতে পারে। এক্ষেত্রে বর্তমান পঞ্চায়েত প্রধানের সঙ্গে প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধানের দড়ি টানাটানিকেও দায়ী করছেন কেউ কেউ।