বিষাক্ত মদ পান করে প্রাণ গেল কমপক্ষে ২৪ জনের। যদিও অসমর্থিত সূত্রের দাবি, পড়শি রাজ্য বিহারের এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু, সরকারি হিসাব বলছে, বিষাক্ত মদ পানের জেরে এখনও পর্যন্ত সীবান জেলায় ২০ এবং সারণ জেলায় চারজনকে প্রাণ খোয়াতে হয়েছে।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে সীবানের পুলিশ সুপার অমিতেষ কুমার জানান, 'আমি মৃত্যুর খবর পেয়েছি এবং তদন্ত চলছে। ওই এলাকায় মদ পাচার চক্রের রমরমা ক্রমশ বাড়ছে। তাঁদের এলাকায় মদ পাচার এবং বেআইনি মদ বিক্রি হওয়ার অভিযোগে ইতিমধ্যে স্থানীয় ভগবানপুর হাট থানার স্টেশন হাউস অফিসার নীরজ মিশ্রা এবং ওই এলাকার চৌকিদারকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।'
সূত্রের দাবি, বিষাক্ত মদ খেয়ে এখনও পর্যন্ত সারণে অন্তত ছয় ব্যক্তির প্রাণ গিয়েছে। কিন্তু, সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের তরফে চারজনের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জেলাশাসক মুকুল কুমার গুপ্তা জানান, সব মিলিয়ে মোট ৩৮ জনের অসুস্থ হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। তাঁদের অধিকাংশকেই সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এই ঘটনার জেরে আবগারি দফতরের সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের শো কজ নোটিস ধরানো হয়েছে। জেলাশাসক এই প্রসঙ্গে জানান, 'তাঁদের দেওয়া শো কজের জবাবে যদি কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্ট না হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হবে।'
এমনকী, এই ঘটনায় তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা কোনও অভিযোগ প্রমাণিত হলে ওই আধিকারিকদের কঠোর আইনি ও প্রশাসনিক পদক্ষেপের মুখেও পড়তে হবে বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক।
অন্যদিকে, সীবানের সিভিল সার্জেন ডা. শ্রীনিবাস প্রসাদ জানিয়েছেন, দুই মহিলা-সহ মোট ২৫ জনকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পাশাপাশি, আরও চারজনকে পটনা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।
সারণের পুলিশ সুপার কুমার আশিস জানিয়েছেন, এই ঘটনার তদন্তের জন্য একটি বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট গঠন করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই মোট আটজনের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ঘটনায় স্থানীয় চৌকিদার এবং পুলিশ আধিকারিকের বিরুদ্ধেও নানা অভিযোগ উঠেছে। মাসরক থানার এসএইচও এবং মাসরক জোনের অ্য়ান্টি-লিকার টাস্ক ফোর্সের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিরকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় পদক্ষেপ করা হবে বলেও জানিয়েছেন সারণের পুলিশ সুপার।
পুলিশ প্রশাসনের সদর কার্যালয়ের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন, 'এই ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। কীভাবে এই এলাকায় মদ পাচার করা হচ্ছিল এবং তা গ্রামবাসীর হাতে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছিল, সেই বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।'
এদিকে, এই ঘটনার জন্য পুলিশ ও প্রশাসনকেই কাঠগড়ায় তুলে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা এত দিন ধরে সবই জানতেন। কিন্তু, তাঁরা কেউই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেননি।