হ্যারিকেন হেলেনের দাপটে বিধ্বস্ত দক্ষিণ-পূর্ব আমেরিকার বিস্তীর্ণ অঞ্চল। শেষ পাওয়া খবর অনুসারে, ভয়াবহ এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে ইতিমধ্যেই অন্তত ৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন লক্ষ-লক্ষ মানুষ।
হ্যারিকেনের দাপট যেমন মার্কিন মুলুকে ধ্বংস লীলা চালিয়েছে, তেমনই বিপদ বাড়িয়েছে ঝড় পরবর্তী তুমুল বৃষ্টি। যার জেরে অসংখ্য নাগরিক অসহায় অবস্থায় জলমগ্ন এলাকাগুলিতে আটকে রয়েছেন। তাঁদের অনেকেরই বাড়িঘর একেবারে তছনছ হয়ে গিয়েছে।
তাঁরা সকলেই অপেক্ষা করছেন, কতক্ষণে উদ্ধারকারী দল আসবে এবং তাঁদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাবে।
ফ্লোরিডার এক ছোট শহরের বাসিন্দা জুনেলিয়া ইংল্য়ান্ড বলেন, 'এখন যে পরিমাণ মানুষ গৃহহারা অবস্থায় রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছেন, আমি এর আগে কোনও দিন এত মানুষকে একসঙ্গে এভাবে তাঁদের ছাদ হারাতে দেখিনি।'
জুনেলিয়া একজন ব্যবসায়ী। তাঁর নিজের একটি মাছের বাজার রয়েছে। সেটি তিনি খুলে দিয়েছেন দুর্গতদের জন্য। যাতে তাঁরা অন্তত সাময়িকভাবে মাথা গোঁজার জায়গাটুকু পান। এঁদের অনেকেই ওই মহিলার আত্মীয় ও বন্ধু। এবং তাঁরা সকলে নিজেদের ধ্বংস হয়ে যাওয়া বাড়ির জন্য বিমা পর্যন্ত পাবেন না!
বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই ফ্লোরিডার বিগ বেন্ড অঞ্চলে আছড়ে পড়ে হ্যারিকেন হেলেন। সেটিকে ক্যাটেগরি-৪ হ্যারিকেন হিসাবে চিহ্নিত করেছিল হাওয়া অফিস। যার হাওয়ার গতি ছিল প্রতি ঘণ্টায় ১৪০ মাইল (২২৫ কিলোমিটার)!
সেখান থেকে দ্রুত এই হ্যারিকেন পৌঁছয় জর্জিয়া। সেখানে গভর্নর ব্রায়ান কেম্প শনিবার বলেন, 'দেখে মনে হচ্ছে যেন কোনও বোমা বিস্ফোরণ ঘটেছে'। হ্যারিকেনের তাণ্ডবে ওই এলাকায় যেভাবে ঘর-বাড়ি, রাস্তা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে, তা দেখেই এই মন্তব্য করেন গভর্নর। উল্লেখ্য, আকাশপথে ওই এলাকা পরিদর্শন করেন তিনি।
এরপর, সপ্তাহান্তে হ্যারিকেন হেলেনের প্রভাবে ক্যারোলিনা এবং টেনেসির বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে শুরু হয় তুমুল বৃষ্টি। যার ফলে ওই অঞ্চলের নদীগুলি দু'কূল ছাপিয়ে বইতে শুরু করে। এর ফলে নদীবাঁধগুলির উপরেও প্রবল চাপ পড়ে।
লাগাতার বৃষ্টি, বন্যা ও ধ্বসের কারণে একটা সময়ের পর উত্তর ক্যারোলিনার পশ্চিমাংশ একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এই দুর্যোগের কারণেই ইস্ট টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটি ফুটবল ম্যাচ শুরু করতে বিস্তর দেরি হয়।
মারিও মোরাগা নামে অ্যাশভিলের এক বাসিন্দা বলেন, বিলটামোর গ্রামীণ এলাকায় যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা দেখলে কষ্ট হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা সকলে দল বেঁধে একে অন্যের বাড়ি যাচ্ছেন, সকলের খোঁজ নিচ্ছেন, সকলে সকলের পাশে রয়েছেন।
মারিও আরও জানান, দুর্যোগের পর থেকেই তাঁদের এলাকায় মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। বিদ্যুৎও নেই। সব মিলিয়ে এক ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে রয়েছেন দুর্গতরা।