সম্প্রতি, মার্কিন মুলুকের মেমফিসের বাসিন্দা এক নাবালকের বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছিলেন মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই-এর এজেন্টরা! কেন জানেন? কারণ, কৈশোরে (টিনেজার বা ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়স) পা দেওয়ার আগেই, মাত্র ১২ বছর বয়সে নিজের শোওয়ার ঘরে আস্ত একটি 'নিউক্লিয়ার ফিউশন রিঅ্যাক্টর' (পারমাণবিক ফিউশন চুল্লি) বানিয়ে ফেলেছিল সে! যা দেখে চোখ কপালে ওঠার জোগাড় হয়েছিল দুঁদে মার্কিন গোয়েন্দাদেরও!
যাকে নিয়ে এত কথা, সেই খুদে জিনিয়াসের নাম জ্যাকসন ওসওয়াল্ট। তার এই কীর্তি নিয়ে হঠাৎ করে গত কয়েক দিন সংবাদমাধ্যমে লেখালিখি শুরু হলেও এই ঘটনা কিন্তু কয়েক মাসের পুরোনো। ওই বিষয়ে জ্যাকসন নিজে তার তার এক্স হ্যান্ডেলে যে পোস্টটি করেছে, তার তারিখ বলছে, সেটি পোস্ট করা হয়েছিল গত বছরের ২০ ডিসেম্বর।
সেই পোস্টে জ্যাকসন নিজেই জানিয়েছে, বিশ্বের কনিষ্ঠতম ব্যক্তি হিসাবে পারমাণবিক ফিউশন চুল্লি তৈরি করার জন্য তার নাম 'গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড'-এ উঠে গিয়েছে। আর, সেই একই কারণে সম্প্রতি তার বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছিলেন এফবিআই গোয়েন্দারাও!
জ্যাকসন জানিয়েছেন, মাত্র ১২ বছর বয়সে পারমাণবিক ফিউশন চুল্লি নির্মাণের মতো এত বড় একটি কাজ করতে তাকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল তরুণ মার্কিন পদার্থবিদ টেলর উইলসনের টেড টক অনুষ্ঠানটি। সেই অনুষ্ঠানে টেলর ব্যাখ্যা করেছিলেন, ২০০৮ সালে - যখন তাঁর বয়স মাত্র ১৪ বছর, কীভাবে সেই বয়সেই তিনি নিউক্লিয়ার ফিউশনের উপর নিয়ন্ত্রণ অর্জন করেছিলেন।
জ্যাকসন জানিয়েছেন, টেলরের সেই অভিজ্ঞতা শোনার পর থেকেই জ্যাকসন দৃঢ়প্রতীজ্ঞ হয় যে সে আরও ছোট বয়সে এমনই কোনও বিরাট কাজ করে দেখাবে!
জ্যাকসনের এই যাত্রা শুরু হয়েছিল, বিজ্ঞানকে আরও গভীরভাবে জানার মধ্য দিয়ে। সে প্রথমেই একটি 'ডেমো ফিউসর' তৈরি করে। যা ছিল একটি কর্মক্ষম বা সচল ফিউশন রিঅ্য়াক্টর নির্মাণের প্রাথমিক ধাপ। এই কাজে টাকার প্রয়োজন ছিল। সেই টাকা তাকে তার বাবা-মা দিয়েছিল। যদিও তখনও পর্যন্ত ডেমো ফিউসরটিকে সচল করার বিষয়টি অনেক দূরে ছিল।
এই প্রসঙ্গে জ্যাকসন তার এক্স পোস্টে লিখেছে, 'একটি সচল ফিউশন রিঅ্যাক্টর তৈরির করাটা তখনও অনেক দূরের বিষয় ছিল। আমি যদি ওই সেটআপ-টিকে ১ মিনিটের বেশি চালু রাখতাম, তাহলেই সেটির কেন্দ্রে থাকা গ্রিড গলে যেত এবং সেটি নিজেই নিজেকে ধ্বংস করে ফেলত। বোঝাই যাচ্ছিল, অনেক কাজ করা বাকি রয়েছে। আমি ফের ভ্যাকিউম চেম্বার তৈরি করলাম। ইবে থেকে একটি টার্বোমলিকিউলার পাম্প পেলাম। (আইনসম্মতভাবেই) ডিউটেরিয়াম পেলাম জ্বালানির জন্য এবং ট্যান্টালাম থেকে ফের অভ্যন্তরীণ গ্রিড নির্মাণ করলাম।'
জ্যাকসন জানিয়েছে, সে তার এই অ্যাসাইনমেন্ট শেষ করার জন্য অধিকাংশ পণ্যই ইবে থেকে কিনেছে। প্রায় একবছর ধরে অত্যন্ত জটিল এই যন্ত্রটি নিয়ে লাগাতার কাজ করে গিয়েছে জ্যাকসন। তারপরই মিলেছে সাফল্য।
জ্য়াকসন লিখেছে, 'বেশ কয়েকবার ধরে অত্যন্ত চাপের মধ্যেও সফল পরীক্ষার পর আমার ১৩তম দিনের আগেই আমি ওই ফিউশন তৈরি করতে সক্ষম হই এবং তার প্রমাণ হিসাব এই নিউট্রনগুলি শনাক্ত করতেও সক্ষম হই!'
জ্য়াকসনের এই কীর্তি যে শুধুমাত্র গিনেস বুকে জায়গা করে নিয়েছে, তাই নয়। তার তৈরি করা যন্ত্র যে সম্পূর্ণভাবে কর্মক্ষম, তার স্বীকৃতি ফিউসর.নেট -এর পক্ষ থেকেও দেওয়া হয়েছে। এমনকী, প্রখ্য়াত ফিউশন বিশেষজ্ঞ রিচার্ড হলও একই কথা বলেছেন।
এদিকে, এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে লেখালিখি শুরু হতেই তা এফআইআই-এর নজর কাড়ে। গোয়েন্দারা সটান হাজির হয়ে যান তার জ্যাকসনের বাড়িতে। তার ওই খুদে পারমাণবিক চুল্লি থেকে কোনও ক্ষতিকর বিকিরণ হচ্ছে কিনা, তা তাঁরা খতিয়ে দেখেন। কিন্তু, সবদিক যাচাই করেও এমন কোনও বিকিরণের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ফলত, ফেডারেল গোয়েন্দারা কোনও বাধা ছাড়াই জ্যাকসনকে তার কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেন। যার পর নিজের এক্স পোস্টে জ্যাকসন মজা করে লিখেছে, 'আমি এখনও একজন মুক্ত পুরুষ!'