'ভোটব্য়াঙ্কের স্বার্থে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে মদত' দেওয়ার অভিযোগ তুলে এত দিন বিরোধীদের আক্রমণ করতে দেখা গিয়েছে বিজেপিকে। আর, এবার সেই রোহিঙ্গা ইস্যুতেই কেন্দ্রের প্রধান শাসকদল বিজেপিকে নিশানা করলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অতিশী মার্লেনা সিং!
রবিবার এ নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহকে একটি চিঠি পাঠান অতিশী। তাঁর অভিযোগ, বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার দেশের রাজধানী শহরের নানা প্রান্তে 'রোহিঙ্গাদের বসিয়ে দিচ্ছে'!
ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের ব্যাখ্য়া হল, মূলত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরীকে নিশানা করেই এই পদক্ষেপ করা হয়েছে আম আদমি পার্টি (আপ)-এর তরফ থেকে। তাদের সরাসরি অভিযোগ, এই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের যেভাবে দিল্লির নানা অংশে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হচ্ছে, তা আদতে বিজেপি নেতৃত্বাধী এনডিএ সরকারের 'সচেতন সিদ্ধান্ত'।
এর পালটা হরদীপ সিং পুরী আবার আপ-কে নিশানা করেছেন। তাঁর দাবি, অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দল আসলে 'বিভাজনের রাজনীতি করছে এবং মিথ্যা ন্য়ারেটিভ তৈরি করছে ও অর্ধসত্য বলছে'!
আগামী বছরের শুরুতেই অনুষ্ঠিত হবে দিল্লি বিধানসভার নির্বাচন। তার আগে রাজধানী শহরে রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশিদের অনুপ্রবেশ নিয়ে আপ ও বিজেপি পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ, পালটা অভিযোগ করেই চলেছে।
বিজেপির তরফে ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানানো হয়েছে। তাদের দাবি, বহু বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা - যারা বেআইনিভাবে ভারতে ঢুকেছে এবং এখানেই থেকে গিয়েছে, তাদের অনেকেই নাকি এখন দিল্লি নথিভুক্ত ভোটার! এবং তারা সকলেই আপ-এর সমর্থক।
এই প্রেক্ষাপটে ২০২২ সালে পোস্ট করা হরদীপ সিং পুরীর দু'টি টুইটকে হাতিয়ার করেছেন অতিশী। তাঁর দাবি, দিল্লির সরকার ও আমজনতাকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার রাজধানী শহরের নানা অংশে অবৈধ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বসিয়ে দিয়েছে।
অমিত শাহকে পাঠানো চিঠিতে অতিশী লিখেছেন, 'দেখে মনে হচ্ছে, গত কয়েক বছর ধরেই এসব চলছে। ২০২২ সালের ১৭ অগস্ট কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরী দু'টি টুইট করেছিলেন। যা থেকেই স্পষ্ট যে এটা বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের একটি 'সচেতন সিদ্ধান্ত ও নীতি' - যার মাধ্যমে এই শরণার্থীদের দিল্লির নানা প্রান্তে বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে।...'
'...পুরীর ওই পোস্ট থেকেই মনে হচ্ছে, ওই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাক্কারওয়ালার ইডাব্লিউএস ফ্ল্য়াটগুলিতে থাকার বন্দোবস্ত করে দেওয়া হয়েছিল। এই ফ্ল্যাটগুলি মূলত দিল্লির দরিদ্র বাসিন্দাদের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। মনে হচ্ছে, দিল্লির মানুষের জন্য যে অধিকার ও পরিষেবা নির্মাণ করা হয়েছিল, তা আদতে অনুপ্রবেশকারীদের মধ্য়ে বিলিয়ে দেওয়া হয়েছে।'
অতিশীর এই চিঠির জবাব নিজের এক্স হ্য়ান্ডেলে দিয়েছেন পুরী। নিশানা করেছেন আম আদমি পার্টিকে। তিনি লিখেছেন, 'আম আদমি পার্টি তাদের বিভাজনের রাজনীতি চালিয়েই যাচ্ছে। মিথ্য়া ন্য়ারেটিভ তৈরি করা হচ্ছে। অর্ধসত্য প্রচার করা হচ্ছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য ও তাঁদের প্রকৃত অবস্থান সঙ্গে-সঙ্গেই ব্যাখ্য়া করা হয়েছিল। ওই একই দিনে সেই সংক্রান্ত টুইট করা হয়েছিল। যেটা মনে হচ্ছে ওঁরা নির্দিষ্টভাবেই এড়িয়ে গিয়েছেন। আর সেটাই ওঁরা করে চলেছেন।...'
'...দিল্লিতে কোনও রোহিঙ্গাকেই সরকারি আবাস দেওয়া হয়নি। বাস্তবটা আসলে একেবারে উলটো। আসলে ওঁরাই (আপ) রোহিঙ্গাদের দিল্লিতে আশ্রয় দিচ্ছেন। ওঁরা দিল্লিতে প্রচুর পরিমাণে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ করাচ্ছেন। তাদের জল দিচ্ছেন, বিদ্যুৎ দিচ্ছেন এবং এমনকী, তাদের ১০,০০০ করে টাকাও দেওয়া হয়েছে!'
অন্যদিকে, অতিশীর অভিযোগ হল - বিজেপির মদতে শহরে ঘাঁটি গাড়া রোহিঙ্গারা যে শুধুমাত্র আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সমস্যা সৃষ্টি করছে, তাই নয়। উপরন্তু, তারা শহরের বাসিন্দাদের কাজের সুযোগ এবং সীমিত সম্পদও কেড়ে নিচ্ছে।
সংবাদমাধ্যমের বিভিন্ন রিপোর্ট উল্লেখ করে অতিশী আরও অভিযোগ করেছেন, প্রতিদিন হাজার-হাজার রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢুকে পড়ছে! অতিশীর অভিযোগ, 'এর থেকেই প্রমাণিত যে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার আমাদের দেশের সীমান্ত পাহারা দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ।'