আন্তর্জাতিক মঞ্চে বারংবারই ভারতের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাতে একাধিক অভিযোগ করে থাকে পাকিস্তান। কাশ্মীরি এবং ভারতের সংখ্যালঘুদের ওপর 'অত্যাচার' চালানো হয় বলে ভুয়ো দাবি করে নিজেদের মুখ একাধিকবার পুড়িয়েছে পাকিস্তান। এরই মধ্যে এবার পাক প্রশাসনের কান লাল হল নিজেদের দেশের মানবাধিকার কমিশনেরই রিপোর্টে। ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তান যতবারই ভুয়ো অভিযোগ এনেছে, ভারত পালটা তাদের দেশের সংখ্যালঘুদের খেয়াল রাখার পরামর্শ দিয়েছে। সেই পরামর্শ যে কতটা প্রয়োজনীয়, তাই ফুটে উঠল পাকিস্তানের মানবাধিকার কমিশনের বার্ষিক রিপোর্টে। ২০২২ সালের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা এই রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, পাকিস্তানে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার বেড়েছে।
পাক মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টে বলা হয়েছে, দেশের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক টালমাটাল পরিস্থিতির জন্য ভুগতে হচ্ছে দেশের সংখ্যালঘুদের। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, বর্তমান এবং আগের সরকারের কেউই সংসদকে সম্মান জানাতে পারেনি। শাসন ব্যবস্থার বিভিন্ন শাখা নিজেদেরই বিশ্বাসযোগ্যতার ওপর প্রশ্নচিহ্ন তুলেছে। কমিশনের রিপোর্টে বলা হয়, ব্রিটিশ জমানার 'দেশদ্রোহী আইন' ব্যবহার করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হেনস্থা করা হয়েছে দেশে। রিপোর্টে বলা হয়, ইমরান খানের সমর্থকদের অনেক জায়গাতেই মিছিল করতে দেওয়া হয়নি। আবার অনেক জায়গায় ইমরানের সমর্থকরা নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধিয়েছেন। এই ক্ষেত্রে কোথাও কোথাও সমাবেশের অধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে তো কোথাও সমাবেশের অধিকারের অপব্যবহার করা হয়েছে।
এদিকে গত পাঁচ বছরের মধ্যে পাকিস্তানে জঙ্গি হামলার সংখ্যা সবথেকে বেশি বেড়েছে ২০২২ সালে। রিপোর্ট অনুযায়ী, জঙ্গিদের হামলায় সেদেশে গতবছর ৫৩৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এদিকে বালোচিস্তানে 'নিখোঁজ ব্যক্তি'র সংখ্যাও বেড়েছে। কমিশনের দাবি, বর্তমানে ২,২১০ জনের নিখোঁজ হওয়ার তদন্ত অসমাপ্ত। এদিকে পাকিস্তানে বন্যার জন্য প্রভাবিত হয়েছে ৩.৩ কোটি মানুষ। এই আবহে স্থানীয় সরকার ও প্রশাসনকে আরও কার্যকরী হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে রিপোর্টে। এদিকে রিপোর্ট অনুযায়ী, পাকিস্তানের আহমেদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর হামলার সংখ্যা তড়তড়িয়ে বেড়েছে। এই সম্প্রদায়ের প্রায় ৯০টি সমাধির অপমান করা হয়েছে। পাশাপাশি আহমেদিয়াদের উপাসনাস্থলেও হামলা বেড়েছে।
এদিকে পাকিস্তানের মহিলাদের ওপর অত্যাচারের ঘটনাও বেড়েছে বলে জানানো হয়েছে রিপোর্টে। গতবছর পাকিস্তানে ৪ হাজার ২২৬টি ধর্ষণের অভিযোগ নথিভুক্ত হয়েছে। এদিকে দেশে ধর্মী আচার আচারণের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে কমিশন। ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ কমেছে। তবে গণধোলাইয়ের সংখ্যা বেড়েছে। এদিকে সিন্ধ প্রদেশে ১২০০ জনকে 'বন্ডেড শ্রম' থেকে মুক্ত করা হয়েছে গতবছর। তবে সেই প্রদেশের কমিশন কোনও কাজ করছে না বলে জানানো হয়েছে রিপোর্টে।