গভীর রাতে ঘরে ঢুকে প্রতিবন্ধী তরুণীকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছিল অভিযুক্ত যুবক। বাড়ির লোকেরা টের পেয়ে যাওয়ায়, অভিযুক্তকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন। তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় গ্রামের মোড়লদের কাছে। বসানো হয় সালিশি সভা। তবে এমন গুরুতর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কি সাজা ঘোষণা করা হল?
গ্রামের সালিশি সভায় কান ধরে ১০ বার ওঠবস করার নিদান দিলেন গ্রামের মোড়লরা! যা দেখে হতবাক নির্যাতিতার পরিবার। বুধবার রাতে চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে বাংলাদেশের নওগাঁওয়ে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বছর পঁচিশের নির্যাতিতা তরুণী কথা বলতে পারেন না। ঘটনার রাতেই পাঁচিল টপকে ঘরে ঢুকে পড়ে খোকন মিঞা (৩৫) নামের অভিযুক্ত যুবক।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত যুবক ওই এলাকারই বাসিন্দা। নির্যাতিতা তরুণী মূক হওয়ার সুযোগে, তাঁর ঘরে ঢুকে পড়ে খোকন। অভিযোগ, তাঁর সঙ্গে ধর্ষণের চেষ্টা করে সে। কিন্তু ওই তরুণীর পরিবার ঘরে অপরিচিত কেউ ঢোকার বিষয় টের পেয়ে যান। এরপর পরিবারের সদস্যরা মেয়ের ঘরে ঢুকে দেখেন, ওই যুবক তার সঙ্গে অশালীন আচরণ করছে। অভিযুক্ত যুবকের হাতে নাতে ধরে ফেলেন পরিবারের লোকেরা। সারারাত বাড়িতেই আটকে রাখা হয় অভিযুক্তকে।
বৃহস্পতিবার সকালে পাড়ার মোড়লদের কাছে গিয়ে অভিযোগ জানান নির্যাতিতার বাবা। কিন্তু তাঁকে পুলিশে অভিযোগ দায়ের না-করতে পরামর্শ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। মাতব্বরেরা নির্যাতিতার পরিবারকে বোঝানোর চেষ্টা করে যে, আইন-আদালত করতে গেলে প্রচুর খরচ সাপেক্ষ ব্যাপার। তারচেয়ে তারাই যা শাস্তি দেওয়ার দেবেন। সেই অনুযায়ী সালিশি সভা ডাকা হয়। নির্যাতিতার বাড়ির সামনেই সালিশি সভায় দু’পক্ষের বক্তব্য শোনে মোড়লরা। কিন্তু সব পক্ষের বক্তব্য শুনে মোড়লরা সিদ্ধান্ত নেন যে, ওই অভিযুক্তকে ১০ বার কান ধরে ওঠবস করালেই নাকি উপযুক্ত শাস্তি পাবে অভিযুক্ত! সঙ্গে অভিযুক্ত মুচলেকা লিখে দেবে যে, সে ভবিষ্যতে আর এই ধরনের কোনও কাজ করবে না।
নির্যাতিতার বাবার দাবি, মেয়ের উপর এই জঘন্যতম অত্যাচার হওয়ায়, অভিযুক্তের যাতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পায়, সেই আশায় মোড়লদের কাছে গিয়েছিলাম। কারণ, অর্থাভাবে পুলিশের দ্বারস্থ হওয়ার সাহস পাইনি। তিনি প্রশ্ন তোলেন, আমার মেয়ের উপর অত্যাচারের শাস্তি শুধু মাত্র অভিযুক্তকে ১০ বার কান ধরে ওঠবস! এটা কি ধরনের বিচার হল?
উল্লেখ্য, আইনে সংস্থান রয়েছে ধর্ষণের চেষ্টা প্রমাণিত হলে, অভিযুক্তের ১০ বছর পর্যন্ত কারাবাস হতে পারে। তা না হলে কমপক্ষে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড সঙ্গে জরিমানারও সংস্থান রয়েছে আইনে। সেই জায়গায় গ্রামের মোড়লরা অভিযুক্ত যুবককে মাত্র ১০ বার কান ধরে ওঠবস করানোয়, হতবাক হয়ে গিয়েছেন নির্যাতিতার পরিবারের সদস্যরা।