একটি মৃত্যু - একটি আত্মহত্যা - আর তার জেরেই দেশজুড়ে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। এই একটি ঘটনা প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে, গার্হস্থ্য হিংসার শিকার মহিলাদের রক্ষাকবচ হিসাবে যে আইন রয়েছে, তার দেদার অপব্যবহারের অভিযোগ নিয়ে! প্রশ্ন উঠছে, পারিবারিক আদালতগুলির ভূমিকা নিয়েও।
এখানে যে যুবকের কথা বলা হচ্ছে, তিনি ৩৪ বছরের অতুল সুভাষ। যিনি তাঁর স্ত্রী, তাঁর শ্বশুরবাড়ি এবং সংশ্লিষ্ট পারিবারিক আদালতের বিচারপতিকে কাঠগড়ায় তুলে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।
আত্মহত্যার আগে অতুল একটি ভিডিয়ো বার্তা রেকর্ড করেছিলেন। যা বর্তমানে সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল। সেই ভিডিয়ো বার্তা যেমন মর্মান্তিক, তেমনই উদ্বেগজনক।
ভিডিয়ো বার্তায় কী কী বলেছিলেন অতুল?
সূত্রের দাবি, স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের চাপেই আত্মহত্যার মতো চরম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন অতুল সুভাষ। অভিযোগ, অতুলের স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা তাঁকে এক ভয়ঙ্কর শর্ত দিয়েছিলেন!
তাঁদের দাবি ছিল, অতুল যদি তাঁদের ৩ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেন, একমাত্র তবেই তাঁরা তাঁর বিরুদ্ধে রুজু করা মামলা প্রত্যাহার করে নেবেন। শুধু তাই নয়। অতুলকে তাঁর একমাত্র সন্তানের (নাবালক ছেলে) সঙ্গে দেখা করার বিনিময়ে আরও ৩০ লক্ষ টাকা দিতে বলা হয়েছিল!
অতুল তাঁর শেষ ভিডিয়ো বার্তায় এই সমস্ত কিছু বলে গিয়েছেন। যার জেরে প্রশ্ন উঠছে, বৈবাহিক অশান্তির জেরে শুধুই কি মহিলারা আক্রান্ত হন? নাকি, বহু পুরুষকেও অতুলের মতোই প্রতি মুহূর্তে চরম মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়?
শেষ ভিডিয়ো বার্তায় অতুলকে বলতে শোনা গিয়েছে, 'আমার মরে যাওয়াই ভালো। কারণ, যে অর্থ আমি উপার্জন করেছি, তার সাহায্যে এখন আমার শত্রুরা তাদের শক্তি বাড়াতে চাইছে। আমার রোজগার করা ওই অর্থ ব্যবহার করেই আমাকে শেষ করে দেওয়া হবে। এবং এই চক্র লাগাতার চলবে।...'
'...আমার রোজগারের এই টাকা দিয়েই আমি আমার আয়কর জমা করি। আর এখন সেই টাকার সাহায্যেই আদালত এবং পুলিশ প্রশাসন বাকিদের সঙ্গে নিয়ে আমাকে এবং আমার পরিবারকে হেনস্থা করছে। এই অনাচার বন্ধ হওয়া দরকার। যাই হোক ওরা (শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা) আসলে আমাকে বলছে যাতে আমি নিজেকে শেষ করে দিই।'
এই ভিডিয়ো বার্তাতেই প্রশাসনের প্রতি নির্দিষ্ট করে একটি কথা বলে গিয়েছেন অতুল। তাঁর অন্তিম ইচ্ছা, কোনও অবস্থাতেই তাঁর স্ত্রী এবং শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা যেন তাঁর মৃতদেহের ধারেকাছেও না ঘেঁষে!
অতুল আরও দাবি জানিয়ে গিয়েছেন, যত দিন না তাঁর অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া হয়, ততদিন পর্যন্ত যেন তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন না করা হয়।
অতুল যে কতটা যন্ত্রণা ভোগ করছিলেন, সেটা তাঁর এই অন্তিম বার্তা থেকেই স্পষ্ট। তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, 'এত কিছু হওয়ার পরও যদি অপরাধীরা ছাড়া পেয়ে যায়, তাহলে আমার চিতাভস্ম আদালতের কাছেই কোনও নর্দমায় ফেলে দেবেন! আমি বুঝতে পারছি, আমাদের এই দেশে জীবনের মূল্য ঠিক কতটা!'
এই ভিডিয়ো বার্তায় অতুল তাঁর বাবা-মায়ের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। তিনি বলে গিয়েছেন, তিনি একান্তভাবেই ক্ষমাপ্রার্থী। কারণ, বৃদ্ধ বয়সে বাবা-মায়ের দেখভাল করার জন্য তিনি তাঁদের সঙ্গে থাকতে পারলেন না!