'বিস্মৃত দ্বীপপুঞ্জে' পৌঁছে গেলেন এক 'বহিরাগত'। উত্তর ভানুয়াটুর এক বিচ্ছিন্ন দ্বীপে পা রাখলেন অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডভেঞ্চার ইউটিউবার ব্রডি মস। সেখানকার আদি বাসিন্দাদের সঙ্গে তাঁর আলাপচারিতার ভিডিয়ো ভাইরাল ইউটিউবে। তাঁর এই ভিডিয়ো নজর কেড়েছে নৃবিদ্যায় আগ্রহীদের।
দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের একটি দ্বীপ দেশ উত্তর ভানুয়াটু। বহু দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে এটি গঠিত। সবুজ গহীন সমুদ্রের মাঝের এই দ্বীপগুলি গোটা জগত থেকে আজও বিচ্ছিন্ন। সেখানেই পা রাখলেন এক 'সাদা চামড়া'র মানুষ। পেলেন উষ্ণ অভ্যর্থনা।
কীভাবে গেলেন?
ব্রডি মস নামের ওই ইউটিউবারের ভিডিয়োর বিষয় মূলত প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ, প্রত্যন্ত স্থানের জীবন। সমুদ্রের নীল জলে নেমে মাছ ধরা, অ্যাডভেঞ্জার করাই তাঁর ভিডিয়োর মূল বিষয়বস্তু। সেই ভিডিয়ো বানাতেই তিনি কোয়াকিয়া নামের এক দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপে পৌঁছে যান। সেই দ্বীপে বাস করেন সাদা চামড়ার 'ব্রেট'। এই ব্রেটের কাহিনী চমকপ্রদ। তিনি জানিয়েছেন, একসময়ে তাঁর ঠাকুরদা এই কোয়াকিয়ার স্থানীয়দের থেকে বাড়ি বানিয়ে থাকার অনুমতি পেয়েছিলেন। সেই উত্তরাধিকার সূত্রেই তিনি এই দ্বীপে আসেন। আর তাঁরই অতিথি হিসাবে গিয়েছিলেন ব্রডি নামের ওই ইউটিউবার। আরও পড়ুন: ছবিতে: পরিবারের কারও মৃত্যু হলেই মহিলাদের আঙুল কেটে ফেলা হয়!
এরপর ব্রডি ব্রেটের সঙ্গে আশেপাশের স্থানীয়, আরও বিচ্ছিন্ন দ্বীপের বাসিন্দাদের সঙ্গে দেখা করতে যান। সেখানকার মানুষ ব্রেটকে দেখে অভ্যস্থ। তবে ব্রডিকে এই প্রথম দেখলেন তাঁরা। স্বাভাবিকভাবেই তাঁকে ঘিরে তাঁদের উত্সাহ ছিল সপ্তমে। সবাই মিলে রীতিমতো হই-হুল্লোড় করতে করতে তাঁকে দ্বীপের প্রধানের সঙ্গে দেখা করাতে নিয়ে যান। যাওয়ার পথে দেখা যায়, উত্তেজনার বশে এক ব্যক্তি রীতিমতো তীর-ধনুক তাক করে লাফাচ্ছেন!
এরপর তাদের প্রধান ব্রডিকে সাদর অভ্যর্থনা জানান। তিনি বলেন, আমি, আমার লোকেদের সঙ্গে তোমাদের দু'জনকে অভ্যর্থনা জানাচ্ছি।
এরপর নয়া অতিথি আগমনের আনন্দে তাঁদের অনুষ্ঠান, নাচ-গানে মেতে উঠতে দেখা যায়। সুন্দর সাজে নাচতে দেখা যায় তাঁদের।
ভিডিয়োটি দেখে অনেকেই অবাক হয়েছেন। বিশেষত অনেকেই কমেন্টে লিখেছেন, আমরা নিজেদের তথাকথিত সভ্য বলি। আর ওঁদের 'অসভ্য' বলে ডাকি। অথচ দেখুন, প্রকৃতির এই সন্তানদের জীবন কতটা আনন্দে ভরপুর। ওরা সবাই হাসছে, নাচছে। কোনও অতীত, ভবিষ্যত, রাজনীতি, হিংসার লেশমাত্র নেই। আসলে ওরাই সুখে আছে।
এটি কি আদৌ সঠিক কাজ?
তবে এর পাশাপাশি এমনভাবে তাদের দ্বীপে বহিরাগতদের অনিয়ন্ত্রিত প্রবেশের বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ করেছেন অনেকে। এভাবে প্রবেশ ব্রডি-র জন্য বিপজ্জনক তো বটেই। তার চেয়ে বড় কথা হল, এর ফলে ঘোর বিপদে পড়তে পারেন ওই দ্বীপের বাসিন্দারা। ব্রডির শরীরে এমন কোনও সংক্রামক রোগ থাকতে পারে, যাতে 'সভ্য' জগতের রোগ প্রতিরোধ শক্তি রয়েছে, বা প্রতিষেধক নেওয়া। কিন্তু সেই দ্বীপবাসীর তা নেই। এমন ক্ষেত্রে কী ভয়ানক পরিণতি হতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়। তাছাড়া ব্রডির প্রভাবে বাকি বিশ্বের কোনও প্রভাব পড়তে পারে এই দ্বীপবাসীর জীবনে। এর ফলে তাদের জীবনের সারল্য, অনন্যতা ধ্বংস হতে পারে। পড়ুন তারই এক নমুনা(ক্লিক করুন): সবুজ দ্বীপে সংক্রমণ, কোভিডের কবলে আন্দামানের লুপ্তপ্রায় জনজাতি
ঐতিহ্য, সংস্কৃতির স্বকীয়তাই কোনও গোষ্ঠীর মূল পরিচয়। উপকার করতে গিয়ে পরোক্ষে সেটি ধ্বংস হওয়ার নমুনাও কম নয়। বিশেষজ্ঞ পর্যবেক্ষণ, অনুমোদন ছাড়া তাই এমন অনুপ্রবেশ মোটেও কাম্য নয়।
সারভাইভাল ইন্টারন্যাশনালের অনুমান অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে ১০০টিরও বেশি 'বিচ্ছিন্ন' উপজাতির অস্তিত্ব রয়েছে।