গরম গরম কচুরি হোক বা ডুবো তেলে ভেজে তোলা সিঙাড়া - ময়দা দিয়ে তৈরি এই খাবারগুলির নাম মাত্রেই মুখে জল আসে। বর্তমানে যে পিৎজার স্বাদ সকলের মুখে লেগে থাকে, তাও ময়দা ছাড়া রান্না করা সম্ভব নয়। প্রায় সমস্ত জাঙ্কফুডে ময়দা থাকে। কেক, পেস্ট্রি, প্যাটিস, নুডলস, পাস্তায় তো থাকেই। মুখরোচক হলেও, ময়দা দিয়ে তৈরি খাবার-দাবার অধিক পরিমাণে খেলে স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। এখানে জানুন অধিক পরিমাণে ময়দাযুক্ত খাবার খেলে কী ধরণের সমস্যা হতে পারে।
স্বাস্থ্যের পক্ষে কেন ক্ষতিকর ময়দা:
ময়দা ক্যালরি সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি দিয়ে তৈরি জিনিস আমাদের পেট অনেক সময় পর্যন্ত ভরে রাখে। গম থেকে ময়দা তৈরির সময় এতে উপস্থিত ভালো ব্যাক্টিরিয়াগুলি অপসৃত হয়। তাই ময়দা হজমের প্রক্রিয়ায় শরীরে উপস্থিত পুষ্টিকর উপাদানগুলি ব্যবহার হয়ে যায়। ফলে শরীরে ভিটামিন ও মিনারেলের পরিমাণ কমতে থাকে। পাশাপাশি ময়দা দিয়ে তৈরি খাদ্যবস্তু সংরক্ষণ করে রাখার জন্য এতে নানান ক্ষতিকারক টক্সিন মেশানো হয়। এগুলি শরীরের পক্ষে অত্যধিক ক্ষতিকর। যেমন--
১. বেঞ্জোয়েল পারক্সাইড- এটি একটি ব্লিচিং এজেন্ট। এটি ব্যবহার করে ময়দার ধবধবে সাদা রং পাওয়া যায়। বেঞ্জোয়েল পারক্সাইড ব্যবহার করে দাঁত সাদা করার সামগ্রী উৎপাদন করা হয়। এমনকি হেয়ার ডাইয়ের উপকরণেও বেঞ্জোয়েল পারক্সাইড মেশানো হয়। নিজের একত্রিত অবস্থায় এটি বিস্ফোরক।
২. অ্যালোক্সান- ময়দাকে মখমলি করে তোলার জন্য এতে অ্যালোক্সান নামক এক রাসায়নিক পদার্থ মেশানো হয়। প্রাণীদের ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষায় জানা গিয়েছে যে, এটি প্যানক্রিয়াসের বিটা কোষগুলি নষ্ট করে। যার ফলে টাইপ ২ মধুমেহের আশঙ্কা বেড়ে যায়।
৩. বেনজোইক অ্যাসিড- ময়দা উপস্থিত বেনজোইক অ্যাসিড ও সোডিয়াম মেটা বাই সালফেট বাচ্চা ও গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ক্ষতিকর।
রোজ ময়দায় তৈরি খাবার খেলে দেখা দিতে পারে এই সমস্যাগুলি:
১. ময়দার গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স অত্যন্ত বেশি, প্রায় ৭১। অর্থাৎ অন্যান্য খাদ্যবস্তুর তুলনায় এতে দ্বিগুণ পরিমাণে ক্যালরি থাকে। ফলে শরীরে ক্যালরির মাত্রা বাড়তে পারে। অধিক ক্যালরি খেলে কোষে প্রয়োজনের থেকে অতিরিক্ত গ্লুকোজ লাভ করে, যা পরবর্তীকালে মেদ রূপে জমতে থাকে। এটি ওজন বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। আবার অধিক গ্লুকোজ তৈরির ফলে ডায়বিটিজের আশঙ্কাও বেড়ে যায়। তাই ময়দার ব্যবহারে রাশ টানুন। কারণ এর ফলে অগ্নাশয়ের ইনসুলিন সৃষ্টির গতি কমে যাবে ও মধুমেহর আশঙ্কা বৃদ্ধি পাবে।
২. ময়দা পাচনতন্ত্রে গন্ডগোল সৃষ্টি করতে পারে। এতে অত্যন্ত কম পরিমাণে পুষ্টিকর উপাদান থাকে। আবার ফাইবার এক্কেবারেই থাকে না। ফাইবারের অভাবে হজমে বিলম্ব হয়। তাই নিয়মিত মলত্যাগে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। এমনকি হজমে সমস্যা ও কোষ্ঠকাঠিন্যও হতে পারে।
৩. অধিক ময়দা খেলে রক্তচাপে সমস্যা দেখা দেয়। এর ফলে হৃদরোগের সম্ভাবনা বাড়তে পারে। ময়দায় কোলেস্টেরল থাকে, যা আর্টারি ব্লক করতে পারে। আবার অবসাদও বৃদ্ধি পায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর দুষ্প্রভাব পড়ে। এ ছাড়াও ময়দা অ্যাসিডিক হয়। যা ইনফ্লেমেশন বৃদ্ধি করে।
৪. ময়দায় উপস্থিত গ্লুটেন ফুড অ্যালার্জি ঘটাতে পারে। গ্লুটেন খাবারকে মখমলি টেক্সচার দিয়ে থাকে। উল্লেখ্য, ময়দায় অধিক পরিমাণে গ্লুটেন থাকে।
৫. চাকিতে বা মিলে ময়দা তৈরির সময় এর থেকে সমস্ত প্রোটিন নির্গত হয়ে যায়। যার ফলে ময়দা অ্যাসিডিকে পরিণত হয়। এটি হাড় থেকে ক্যালশিয়াম শোষণ করে, হাড় দুর্বল করে তোলে।