'ডিভোর্সি', 'বান্দারিয়া'-র (হনুমান) মতো কথা বলে লাগাতার অপমান করা হত। মানসিকভাবে অত্যাচার চালাত সহকর্মীরা। একদিন এমনভাবে হাত চেপে ধরা হয়েছিল যে নখ ভেঙে চামড়ার মধ্যে ঢুকে গিয়ে রক্ত বেরোতে শুরু করে দিয়েছিল। একাধিকবার অভিযোগ জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। উলটে যারা মানসিক অত্যাচার চালাত, তাদের পাশে দাঁড়াত শীর্ষ মহল। আর সেই মানসিক অত্যাচার চালানোর মূল হোতা ছিল এক সহকর্মী মহিলা।
নয়ডায় অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের এক মহিলা রিলেশনশিপ অফিসার আত্মহত্যার পরে যে ‘সুইসাইড নোট’ উদ্ধার করা হয়েছে, তাতে এমনই সব অভিযোগ করা হয়েছে। গত সপ্তাহে গত ১২ জুলাই বিকেল চারটে নাগাদ গাজিয়াবাদে নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করে আত্মহত্যা করেন তিনি। পরে পাঁচ পৃষ্ঠার যে ‘সুইসাইড নোট’ উদ্ধার পাওয়া গিয়েছে, তাতে শিউরে ওঠার মতো সব অভিযোগ করা হয়েছে। ওই সুইসাইড নোটের প্রেক্ষিতে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন মহিলা ব্যাঙ্ককর্মীর ভাই।
'লাগাতার মানসিক অত্যাচার চলত, করা হত গালিগালাজ'
দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর ২১ অক্টোবর নয়ডার ১২৮ সেক্টরে অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কে যোগ দিয়েছিলেন ওই মহিলা। সুইসাইড নোটের বয়ান অনুযায়ী, গত ছয় মাস ধরে তাঁর উপরে লাগাতার মানসিক অত্যাচার চালানো হত। দুটি দিনের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন তিনি। গত ২৯ জুন তাঁর কাজের জায়গায় বসে মধ্যাহ্নভোজ সেরেছিল অত্যাচারের মূল হোতা মহিলা-সহ পাঁচজন। কিন্তু জায়গাটা পরিষ্কার করে দিতে বলায় তাঁকে গালিগালাজ করা হয়।
‘রক্ত বের করে দিয়েছিল’
ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, সুইসাইড নোটে অপর যে দিনের কথা বলেছেন যুবতী, তা হল ৯ জুলাই। তিনি দাবি করেছেন, সেদিন তাঁকে উলটো-পালটা কথা বলছিল অত্যাচারের মূল হোতা মহিলা। পালটা মুখ খুলতেই তাঁর হাত চেপে ধরা হয়। এতটা জোরে হাত চেপে ধরা হয় যে নখ ভেঙে চামড়ার মধ্যে ঢুকে যায়। রক্ত বেরোতে থাকে। সেই পরিস্থিতিতে অত্যাচারের মূল হোতা মহিলাকে থাপ্পড় মারেন তিনি। যা নিয়ে উচ্চতর কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করে সেই অত্যাচারকারী মহিলা। তার পাশেই দাঁড়ায় কর্তৃপক্ষ।
যুবতী দাবি করেছেন, তিনি যখনই প্রতিবাদ করেছেন এবং উচ্চতর কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেছেন, তখন তাঁর পাশে দাঁড়ানো হয়নি। উলটে সবসময় তাঁকেই দোষীসাব্যস্ত করা হত। পদত্যাগ করে বাড়ি চলে যেতে বলা হত বলে অভিযোগ করেছেন ওই যুবতী। যিনি সুইসাইড নোটে শেষ আর্জি হিসেবে বলেছেন যে যারা তাঁর উপর অত্যাচার চালাত, তাদের যেন শাস্তি দেওয়া হয়।
পুলিশ ও অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ কী বলছে?
পুলিশ জানিয়েছে যে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১০৮ ধারায় (আত্মহত্যার পথে ঠেলে দেওয়া) ওই ব্যাঙ্ককর্মীর কয়েকজন সহকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে। যে সুইসাইড নোট উদ্ধার করা হয়েছে, তা পাঠানো হয়েছে বিশেষজ্ঞদের কাছে। ওটা যুবতীর হাতের লেখা কিনা, তা খতিয়ে দেখা হবে। অন্যদিকে , অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের তরফে সেই ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করা হয়েছে। কর্মক্ষেত্রে যে কোনওরকম হিংসার বিরোধী তারা।